ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এক মৌসুম আগে লা লিগাকে বিদায় বলেছেন। চলতি মৌসুমে শুরু থেকেই চোটের জন্য খেলতে পারছেন না লিওনেল মেসি। দুই মহাতারকার অনুপস্থিতিতে যারা হতে পারতেন উজ্জ্বলতার কেন্দ্রবিন্দু, সেই অ্যান্টনে গ্রিজম্যান, এডেন হ্যাজার্ড ও হোয়াও ফেলিক্সরা হয়ে আছেন নিজেদের ছায়া। কাড়ি কাড়ি অর্থ ঢেলে ক্লাবগুলো এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে পেয়েছে লবডঙ্কা!
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ছেড়ে এ মৌসুমে বার্সেলোনায় এসেছেন গ্রিজম্যান। তাকে পেতে বার্সাকে গুণতে হয়েছে ১২০ মিলিয়ন ইউরো। ফরাসি ফরোয়ার্ডের শূন্যস্থান পূরণে একদমই দেরি করেনি অ্যাটলেটিকো। ১২৬ মিলিয়ন ইউরোতে বেনফিকা থেকে পর্তুগালের ১৯ বছর বয়সী ‘ভবিষ্যৎ রোনালদো’ ফেলিক্সকে উড়িয়ে এনেছে মাদ্রিদে।
মাদ্রিদের আরেক জায়ান্ট রিয়াল রোনালদোর শূন্যস্থান পূরণে সময় নিয়েছে এক মৌসুম। ১০০ মিলিয়ন ইউরোয় চেলসি থেকে এনেছে বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড এডেন হ্যাজার্ডকে।
গ্রিজম্যান, হ্যাজার্ড ও ফেলিক্স- তিন খেলোয়াড়কে কিনতে বার্সা, রিয়াল ও অ্যাটলেটিকোর সম্মিলিত খরচ ৩৪৬ মিলিয়ন ইউরো। বাংলাদেশি অর্থে যা ৩ হাজার ২শ কোটি টাকারও বেশি!
শনিবার মাঠে নেমেছিলেন তিন খেলোয়াড়ই। বার্সার জার্সিতে গেটাফের মাঠে খেলেছেন গ্রিজু। মাদ্রিদ ডার্বির মতো ধুন্ধুমার লড়াইয়ে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয়েছিলেন ফেলিক্স ও হ্যাজার্ড।
একইদিনে মাঠে নেমেছেন ৩২শ কোটির তিন খেলোয়াড়। কেমন করেন তারা দেখার ছিল। হতাশ করেছেন তিনজনই। গোল তো পাননি, গোলের পেছনে কোনো সহায়তাও আসেনি তাদের থেকে। বার্সা যদিও ২-০ গোলে জিতেছে, মাদ্রিদ ডার্বিতে আবার কোনো গোলেরই দেখা পায়নি দর্শকরা। দুদলের ২২৬ মিলিয়নের দুই খেলোয়াড় ছিলেন বেশরকম নিষ্প্রভ!
এদিন বাধ্য হয়ে তিন খেলোয়াড়কেই তুলে নিয়েছেন তাদের কোচরা। গ্রিজম্যান মাঠ ছেড়েছেন ৭৪ মিনিটে, ফেলিক্স ৭০ ও হ্যাজার্ডকে তুলে নেয়া হয় ম্যাচ কয়েক মিনিট বাকি থাকতে।
হ্যাজার্ডের অনুজ্জ্বলতার পেছনে অবশ্য যুক্তিযুক্ত কারণ আছে! মাত্রই চোট সেরে উঠেছেন। তবে রিয়ালের হয়ে তিন ম্যাচ খেলে একটি গোলও না করাতে পারাটা তার নামের পাশে একদমই বেমানান!
গ্রিজম্যান বার্সার হয়ে এখন পর্যন্ত খেলেছেন ৮ ম্যাচ। লা লিগার ৭ ম্যাচে মাঠে ছিলেন। সময়ের হিসাবে মোট ৭০৫ মিনিট। এ সময়ে গোল করেছেন ৩টি, করিয়েছেন ২টি। যা করেছেন বা করিয়েছেন সবগুলোই নিজেদের মাঠে। প্রতিপক্ষের মাঠে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়াই ভার। শনিবার গেটাফের মাঠেও ছিল একই দৃশ্য। তার চেয়ে বরং ১৭ বছর বয়সী ‘বিস্ময় বালক’ আনসু ফাতিকেই মনে ধরেছে বার্সা সমর্থকদের। যার উঠে আসা আবার বার্সার যুব একাডেমি লা মাসিয়া থেকে।
ফেলিক্সের প্রতিভা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই অ্যাটলেটিকো কোচ ডিয়েগো সিমিওনের। তবে ১৯ বছর বয়সী ফুটবলারের যা অভাব তা হল, ধারাবাহিকতা। বেনফিকায় থাকতে যা দেখিয়েছেন, স্পেনে এসে সেটাই যেন ভুলে যাচ্ছেন পর্তুগালের ভবিষ্যৎ তারকা। আগের ক্লাবে ২০ গোল করে হৈচৈ বাঁধিয়ে দিয়েছিলেন। মাদ্রিদে এসে ৮ ম্যাচে গোল করেছেন সবে ২টি। তার থেকে সতীর্থরা সহায়তা পেয়েছে মাত্র ১ গোলে!
মৌসুম সবে শুরু। নতুন ক্লাবে নেমেই গোলের পর গোল পাবেন ফুটবলাররা এমন আশা সমর্থকদের থাকেই। তবে ‘প্রথম দেখায় প্রেম’ এই অনুভূতিটা এখন পর্যন্ত যে তৈরি করতে পারেননি তিনজনই। এভাবে চলতে থাকলে হাল্কা প্রেম ক্ষোভে পরিণত হতেও হয়ত সময় লাগবে না!