জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১০ বছরের কারাদণ্ডের প্রতিবাদে সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শুক্রবার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ এবং শনিবার দেশব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
নয়াপল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচির ঘোষণা দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল আমরা দেশনেত্রীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, রায় আপনার বিরুদ্ধে গেলে আমরা কী ধরণের কর্মসূচি দেবো? তিনি তখন নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, কোন রকম হঠকারী বা সহিংস কর্মসূচি দেয়া যাবে না। সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে হবে।
‘আমরা ক্ষোভের সঙ্গে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ বরাবরই নিজেরাই সন্ত্রাস ও সহিংসতা সৃষ্টি করে বাংলাদেশের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই, গণতন্ত্র চাই। দেশনেত্রীর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে চাই। যে দেশনেত্রী কারাগারে থেকেও নীরবে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন, আজ তাকে অন্যায়ভাবে তারা সাজা দিয়েছে। ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না।’
এ কারণেই খালেদা জিয়ার নির্দেশে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হয়েছে বলে জানান মির্জা ফখরুল। এই দু’দিনের কর্মসূচির পর আরও কর্মসূচি জানানো হবে। দেশজুড়ে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান যেন তারা ধৈর্য রাখেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত তিনদিন ধরে সরকার দেশে এক ধরনের যুদ্ধাবস্থা তৈরি করে রেখেছে এই মামলার রায়কে কেন্দ্র করে। সরকারই গোটা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করেছে এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে পুরো রাষ্ট্রে সন্ত্রাস চালিয়েছে।
‘দেশনেত্রী সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে গাড়িবহর নিয়ে আসছিলেন। তিনি বরাবর আদালতে হাজিরা দিয়েছেন এবং এই রায়ের জন্য আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আজকেও আসছিলেন। তখন গাড়িবহরের সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে।’
পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। এই রায়ের ফলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে এবং বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা আরও বিনষ্ট হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, রায় আইনসম্মত হয়নি। এটি সংবিধানের লঙ্ঘন, এবং সংবিধান লঙ্ঘনের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এই বিচারের রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
রায়ের কপি হাতে পেলেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে এবং জামিন চাওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মওদুদ অভিযোগ করেন, রায় চলাকালে অনেক আইনজীবীকে অনাকাঙ্ক্ষিত দেখিয়ে আদালতের ভেতর যেতে দেয়া হয়নি। সাধারণ জনগণকেও আদালতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এমনকি সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের ক্যামেরাও ঢুকতে দেয়া হয়নি। বাংলাদেশের আইন অনুসারে এ ধরনের মামলায় বিচার হবে জনসমক্ষে, অর্থাৎ পাবলিক ট্রায়াল হবে। কিন্তু এটা কোন পাবলিক ট্রায়াল ছিল না।
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, জাল-জালিয়াতি করা কিছু দলিল ও নথিপত্রের ভিত্তিতে মামলাটি করা হয়েছিল। সেখানে কারও সই ছিল না। ভুয়া সাক্ষ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে বিচারকাজটি পরিচালনা করা হয়েছে। কোন মামলায় জালিয়াতি হলে তাৎক্ষণিক সেই বিচার প্রক্রিয়া খারিজ হয়ে যায়। বিএনপির পক্ষ থেকে আবেদনও করা হয়েছিল বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যেন রায় ঘোষণা না করা হয়। কিন্তু তারপরও আদালত রায় ঘোষণা করেছেন।
পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান মওদুদ আহমেদ। রোববারই এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।
খালেদা জিয়া আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা, এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যের বিষয়ে মওদুদ বলেন, ‘নির্বাচন করতে পারবেন কি পারবেন না তা কি আইনমন্ত্রী ঠিক করবেন? এর সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টে হবে। আমাদের মতে তিনি (খালেদা জিয়া) অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। এ ব্যাপারে দুই ধরনেরই সিদ্ধান্ত আছে।’
আপিলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির আগে খালেদা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব নয় বলে জানান মওদুদ আহমেদ।