তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এগুচ্ছে দেশের বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানি। জায়গা দখল করে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের সেরা ৫ হাজার কোম্পানির তালিকায় নাম লেখাতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশের সামিট গ্রুপ।
সম্প্রতি আমেরিকার ব্যবস্থাপনা পরামর্শক সংস্থা ম্যাককিনসে গ্লোবাল ইনস্টিটিউট বিশ্বের শীর্ষ ৫ হাজার কোম্পানির যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে নাম প্রকাশ না করে বাংলাদেশের একটি কোম্পানির কথা বলা হয়েছে। দেশের কর্পোরেট অঙ্গনের ধারণা সেটি সামিট গ্রুপ অব কোম্পানি।
কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিবেদনটি যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে এটা খুশির সংবাদ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সামিট গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, হ্যাঁ আমিও এটা শুনেছি। সত্যি যদি আমেরিকান ওই প্রতিষ্ঠান এমন ধারণা করে থাকে এবং আমাদের প্রতিষ্ঠান যদি ওই ৫ হাজার শীর্ষ কোম্পানীর একটি হয়ে থাকে তাহলে বলবো এটা ভাল সংবাদ। আমি বলবো আলহামদুলিল্লাহ।
বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ হাজার কোম্পানির একটি বাংলাদেশি হওয়ায় অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের একটি কোম্পানি আন্তর্জাতিক নিয়মতান্ত্রিকতা বজায় রেখে ব্যবসা পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্থান করে নেয়ার অর্থ হচ্ছে কোম্পানিটির প্রকৃত স্বচ্ছতা ও দক্ষতা রয়েছে। এটি শুধু ওই কোম্পানির নয়, গোটা দেশেরই প্রতিনিধিত্ব করছে বিশ্ব দরবারে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এটা অবশ্যই ভাল সংবাদ। এতে কিছু ইতিবাচক দিক আছে যে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যবসা করছে এবং স্বীকৃতিও পাচ্ছে।
“সামিট খুব পুরানো ও দক্ষ কোম্পানি। তাদের ব্যবসায়িক দক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তারা যে ভাল কিছু করতে সক্ষম, তা প্রমাণিত। এ ধরনের কোম্পানিগুলোর জন্য দেশে বিনিয়োগ করার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিলে দেশে বহুমুখি অর্থনীতি তৈরি হতো।”
তিনি বলেন, বিদেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। সঠিক নিয়মকানুন মেনেই করতে হয়ে। সৃজনশীলতা ও দক্ষতার পরিচয়ও দিতে হয়। এসব গুণ না থাকলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে টিকে থাকা যায় না। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিশ্ববাজারে স্থান করে নিচ্ছে তা জাতীয় ভাবমূর্তির জন্য মাইলফলক।
তবে এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে বলে মনে করেন ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ব্যবসা করার জন্য কোম্পানিগুলো কিন্তু দেশের বাইরে অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। মূলধন নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক নিয়ন্ত্রণ আছে। তারমধ্যেও বৈধপথে অনেকে নিয়ে যায়। কিন্তু বৈধপথে এত বড় অংকের বিনিয়োগ কিভাবে গেল। দেশে বিনিয়োগ করলে তারা দেশের অর্থনীতিতে আরো অবদান রাখতে পারতেন।
তবে সেক্ষেত্রে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন: বিনিয়োগকারীরা দেশের বাইরে সহজে বিনিয়োগের সুযোগ পান। দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এ কারণে সাদা টাকাও বাইরে চলে যায়।
বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশ এখনো বিনিয়াগ ঘাটতিতে রয়েছে। সেদিক থেকে বলা যায়, বিনিয়োগ পরিবেশের দুর্বলতার কারণে উদ্যোক্তারা বিদেশে বিনিয়োগ করছে। এটা নেতিবাচক দিক।
পণ্যে বৈচিত্র্য আনার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, আমেরিকা-চীনের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ভিয়েতনাম ভালো করছে। তারা পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে সক্ষম হয়েছে বলেই বাজার ধরতে পেরেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের মনোযোগী হওয়া দরকার। শুধু তৈরি পোশাক নয়, মোবাইল ফোন এবং গাড়িসহ অন্য পণ্যে মনোযোগ বাড়াতে হবে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ম্যাককিনসে গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে বাংলাদেশি ওই প্রতিষ্ঠানের মোট আয় ছিল ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। প্রতিবেদনে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানটির নাম স্পষ্ট করে বলা না হলেও যোগাযোগ, বাণিজ্য, শিপিং, জ্বালানি এবং বিদ্যুতের মতো বৃহৎ খাতের সঙ্গে জড়িত হিসেবে একে সামিট গ্রুপ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ার একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল। সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করে। প্রথম স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদক হিসেবে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করে সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল।
২০১৯ সালের অক্টোবরে সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের ২২ শতাংশ শেয়ার ৩৩০ মিলিয়ন ডলারে কিনে নেয় জাপানের বিদ্যুৎ কোম্পানি জেরা।