দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সংগঠন “সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির” ব্যানারে মঙ্গলবার পাল্টাপালি দুটি সংবাদ সম্মেলন হয়েছে।
আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন ও সাধারণ সম্পাদক এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের আহ্বানে সহ-সভাপতি উম্মে কুলসুম রেখা, সহ-সম্পাদক শামীমা সুলতানা দীপ্তি এবং কার্যনির্বাহী সদস্য মো. হাসিবুর রহমান, মহসিনা আক্তার ও শেখ তাহসিন আলী উপস্থিতে শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে একটি সংবাদ সম্মেলনের হয়।
ঠিক এর একটু পরই ওই সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদে একই স্থানে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন সমিতির সহ-সভাপতি মো. অজি উল্লাহ, সহ-সম্পাদক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম এবং কোষাধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম হিরুসহ সমিতির কয়েকজন নেতা।
সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন ও সাধারণ সম্পাদক এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের আহ্বানে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, দেশের গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় আইনজীবী সমিতি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে আসছে। জয়নুল আবেদীন বলেন, সম্প্রতি প্রধান বিচারপতির একটি বিশেষ বক্তব্যকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীর বক্তব্য আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও কিছু প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। বিচার বিভাগ নিয়ে জনমনে কোনো রকম সংশসয় এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি হোক তা আমরা চাই না।
জয়নুল আবেদীন লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন বলে কিছু নেই, সুশাসন বলে কিছু নেই, মানবাধিকার বলে কিছু নেই। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করুক তা প্রশাসন বা অন্য বিভাগগুলো চায় না। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই অন্য দেশে প্রধান বিচারপতির প্রকাশ্যে কথা বলার প্রয়োজন হয না, কারণ সেখানে আইনের শাসন আছে। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আমাদের দেশে সু-শাসন এবং গণতন্ত্রের অভাব রয়েছে এবং স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না।’ রাষ্ট্রের আইন বিভাগ সংবিধান সম্মতভাবে আইন প্রণয়ন করছে কিনা, শাসন বিভাগ আইন যথাযথভাবে পালন করছে কিনা, সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে সেই সব দেখার এখতিয়ার এবং দায়িত্ব বিচার বিভাগের রয়েছে।’
এর পরেই সমিতির সভাপতি- সাধারণ সম্পাদকের সংবাদ সম্মেলনকে দুঃখজনক, অনভিপ্রেত উল্লেখ করে সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. অজি উল্লাহ তার বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি লিখিত বক্তব্যে দাবি করেন, সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক কার্যকরী পরিষদের অন্যান্য সদস্যের সাথে কোনো রকম আলোচনা ছাড়াই সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তাদের ওই সংবাদ সম্মেলন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
তিনি বলেন, সরকারের কেউই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কিংবা বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোনো বক্তব্য দেননি।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে টুইস্ট করে তার বিপরীতে প্রতিক্রিয়া দেওয়া আইনজীবী সমিতির দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। সমিতির এই রকম প্রতিক্রিয়া জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে এবং রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মাঝে বিরাজমান সম্প্রীতির মধ্যে ফাটল ধরাতে পারে।
তবে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করলেও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে কোনো বিভাজন নেই বলেও দাবি করেন মো. অজি উল্লাহ। তিনি বলেন আইনজীবীদের পেশাগত বিষয়ে তারা এক। কিন্তু রাজনৈতিক সমর্থন নিয়ে সমিতিতে নির্বাচিত হওয়ায় তাদের মাঝে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কিছু ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।