মাজহারুল হক মান্না, এস এম আশিকুজ্জামান: গাজীপুরের ১০ বছরের এক শিশু ধর্ষণের মামলার আসামির জামিন আবেদনে জালিয়াতি ধরা পড়ায় আসামির জামিন বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জামিন আবেদনে উল্লেখিত আইনজীবী ও তদবিরকারিকে তলব করা হয়েছে।
বিচারপতি মো.শওকত হোসেন ও বিচারপতি মো.নজরুল ইসলাম তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ এই আদেশ দেন। এসময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল।
রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী জানান: গাজীপুর সদরের রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার নয়নপুর গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলে মো. রবিউল ইসলামকে আবেদনে তদবিরকারী হিসেবে দেখানো হয়েছে। আর আবেদনকারী আইনজীবী হিসেবে মো. জামাল উদ্দিন নামে একজনকে দেখানো হয়। কিন্তু জামালের যে আইনজীবীর আইডি দেখানো হয়েছে সেই আইডিতে আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন মো. হারুন অর রশীদ।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর গাজীপুর উপজেলার শ্রীপুরের রাজাবাড়ী ইউনিয়নের চিনাশুখানিয়া গ্রামে ওই শিশুকে ঘর ঝাড়ু দেয়ার কথা বলে প্রবাস ফেরত প্রতিবেশী বিল্লাল ভূঁইয়া (৪৫) ধর্ষণ করে। ধর্ষক বিল্লাল ভূঁইয়া একই গ্রামের মৃত রহিম উদ্দিনের ছেলে। তার স্ত্রী ও ছেলে বিদেশে থাকে। পরে বিষয়টি প্রকাশ না করতে হুমকি দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয় শিশুটিকে।
‘‘একপর্যায়ে শারিরীকভাবে অসুস্থ অনুভব করলে শিশুটি ধর্ষণের কথা তার মাকে জানায়। পরে বিল্লাল ভূঁইয়া, তার ভাই দুলাল ভূঁইয়ার ছেলে রুবেল ভূঁইয়া ও মৃত তাজউদ্দিনের ছেলে হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়াকে আসামি করে মেয়েটির মা মামলা করেন।’’
ধর্ষণের ঘটনার শুরু থেকে বিল্লাল পলাতক ছিল। এর মধ্যে মেডিকেল প্রতিবেদনে ধর্ষণের প্রমাণ মিলে। পরে ১৭ নভেম্বর এই মামলায় চার্জশীট দেয় পুলিশ। এই অবস্থায় চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি আত্মসমর্পণ করে বিল্লাল। তখন আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পরবর্তীতে ২৪ এপ্রিল জামিন আবেদন করে বিল্লাল। ওই আবেদন খারিজ করে দেন গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ। এরপর গত ৯ মে হাইকোর্ট তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। হাইকোর্টের জামিন আবেদনে বলা হয়, মেয়েটির বয়স ২১। দুইজন একে অপরকে ভালোবাসে। মেয়ের মা সেটি পছন্দ করেন না। ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেনি। ধর্ষনের কোনো প্রমাণ নেই মেডিকেল সনদে।
কিন্তু হাইকোর্টের এই জামিনের আদেশ নিম্ন আদালতে যাওয়ার পর জালিয়াতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আদালতে নজরে আসে। এরপর জালিয়াতির বিষয়টি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি রেজিস্ট্রার অবহিত করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার হাইকোর্ট আগের আদেশ প্রত্যাহার করে আসামির জামিন বাতিল করে উল্লেখিত আইনজীবী ও তদবিরকারিকে তলব করেন।