আমাদের সমাজে নানা ক্ষেত্রে শিশুরা লাঞ্ছনা, অবহেলা বা বঞ্চনার শিকার হয়। এসব শিশুদের সুরক্ষায় দেশে প্রয়োজনীয় আইন থাকলেও সে আইনের পুরোপুরি বাস্তবায়ন আমরা অনেক ক্ষেত্রেই দেখতে পাই না।
তবে বিভিন্ন সময় দেশের উচ্চ আদালত তথা হাইকোর্টের দেয়া আদেশ শিশুর অধিকার রক্ষায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, হাইকোর্টের আদেশের পর ‘দণ্ডিত ১২১ শিশুর মুক্তি’ কিংবা প্রাথমিক পরীক্ষায় বহিষ্কৃত শিশুদের পুনঃপরীক্ষার পর ফল প্রকাশের ঘটনা। এধরণের পদক্ষেপ শিশুর অধিকার রক্ষায় অবশ্যই আশাজাগানিয়া।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের দণ্ডে অন্তরীন শিশুদের মুক্তি
‘আইনে মানা, তবু ১২১ শিশুর দণ্ড’ শিরোনামে পত্রিকার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন চিলড্রেন’স চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল হালিম। এরপর হাইকোর্ট বেঞ্চ তার স্বতঃপ্রণোদিত আদেশে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া দণ্ডে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে অন্তরীণ ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দেন। এছাড়া ১২ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সী শিশুদের সংশ্লিষ্ট শিশু আদালতের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে জামিনে মুক্তির নির্দেশ দেয়া হয়। উচ্চ আদালতের এই আদেশের পরই গত ১১ নভেম্বর ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের মুক্তি দেওয়া হয়। আর পরবর্তিতে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে থাকা অন্তরীন শিশুদের ৬ মাসের জামিন দিয়ে অন্তরীন অবস্থা থেকে মুক্ত করা হয়।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের পথ বন্ধ হলো
গত বছরের ১৭ থেকে ২৪ নভেম্বর প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চলাকালে প্রায় দুইশ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তিতে এবিষয়টি নিয়ে পত্রিকায় ‘পিইসি পরীক্ষায় শিশু বহিষ্কার কেন’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পত্রিকার এই প্রতিবেদনটি গত ২১ নভেম্বর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল। এরপর আদালত শিশু শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারিসহ আদেশ দেন। আদালত তার রুলে, ‘প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নির্দেশনাবলীর ১১ নম্বর নির্দেশনাটি (যার আওতায় শিশুদের বহিষ্কার করা হইয়েছিল) কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চান। এছারা আদালত তার আদেশে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের পুনরায় পরীক্ষা নিতে এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিক্ষার ফল প্রকাশের নির্দেশ দেন। উচ্চ আদালতের এই নির্দেশের পর গত ২৪, ২৬ এবং ২৮ ডিসেম্বর সকাল ও বিকেলে দুই ধাপে পরীক্ষা নেয়া হয়। এবং পরবর্তিতে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। অন্যদিকে, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনীতে অংশ নেওয়া ক্ষুদে পরীক্ষার্থীদের বহিষ্কারের নির্দেশনা সম্ভলিত ১১ নম্বর নির্দেশনাটি রহিত করা হয়। যার ফলে প্রাথমিক সমাপনীতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের সুযোগ বন্ধ হয়।
শিশুদের অধিকার সংক্রান্ত এই দুটি প্রেক্ষাপটেই আমার দেখছি আমাদের উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপের দৃষ্টান্তমূলক ফলশ্রুতি। তাই শিশুর অধিকার রক্ষায় উচ্চ আদালত আরও ভূমিকা রাখুক এবং শিশুদের সুরক্ষায় আমাদের প্রচলিত আইনের পুরোপুরি বাস্তবায়ন ঘটুক সেটাই প্রত্যাশা। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, দেশের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের বেশি শিশু। আর এই শিশুরাই গড়বে আমাদের আগামীর ভবিষ্যৎ।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)