যুদ্ধে মারা গেলেও যাতে শিশু সন্তানের মরদেহ সহজেই শনাক্ত করতে পারেন; সে জন্য এক অভিনব কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন ইউক্রেন থেকে পালানো এক মা। তিনি দুই বছর বয়সী মেয়ের পিঠে নাম, বয়স এবং ফোন নম্বরের বিবরণ লিখে দিয়েছেন।
শিশুটির মা সাসা মাকোভি বিবিসিকে জানান, কিয়েভ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় শিশুটি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে বা নিহত হলে তার গায়ের ভিরা নাম, তার বয়স এবং কিছু ফোন নম্বর দেখে তাকে যাতে শনাক্ত করা সহজ হয়, তাই তিনি এ কাজটি করেছেন।
‘‘আমাদের মৃত্যু হলেও তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে এবং ছোট্ট শিশুটি কে তা জানতে পারবে সবাই!’’
সৌভাগ্যক্রমে তেমনটি ঘটেনি। পরিবারটি এখন ফ্রান্সে নিরাপদে রয়েছেন। সেখানে তারা ভালোবাসা এবং যত্নে ঘিরে রয়েছেন এমন অনুভব করছেন বলে জানান।
দেশটিতে আশ্রয় নেবার পর সাসা মাকোভি ইনস্টাগ্রামে ভিরার পিঠে লেখাটির একটি ছবি পোস্ট করেন এবং ছবিটি ভাইরাল পরবর্তীতে ভাইরাল হয়।
মিসেস মাকোভি বিবিসি রেডিও ফোর এর অনুষ্ঠান দ্য ওয়ার্ল্ড টুনাইটে জানান, যুদ্ধের প্রথম দিন আমরা কিয়েভ থেকে পালানোর জন্য সবকিছু প্রস্তুত করছিলাম এবং আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে এটি নিরাপদ হবে কিনা! চারিদিকে তখন বোমা পড়ার ভীষণ শব্দ! সেই ভীতিকর মুহূর্তে তারা জিনিসপত্র প্যাক করছিল বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে মাকোভি বলেন, আমাদের বাড়িতে রকেট হামলা করা হবে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম না।
‘‘আমার সবচেয়ে বড় ভয় ছিল যে, ভিরা হারিয়ে যাবে বা আমরা মারা যাব এবং তাকে কখনোই খুঁজে পাওয়া যাবে না। সে কে বা সে কোনো পরিবার থেকে এসেছে তাও অজানা থেকে যাবে।’’
উদ্বিগ্ন মা আশা করেছিলেন মেয়ে ভিরা হয়তো বেঁচে থাকতে পারবে কিন্তু পরিবারের কোনো সদস্য বেঁচে নেই। এমন অনুভূতিতে মেয়ে ভিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অন্তত যেন তার শৈশবকে দেখতে পায়, তার পরিবার সম্পর্কে জানতে পারে!
“আমি ভেবেছিলাম সে ইন্টারনেট থেকে কিছু তথ্য খুঁজে পাবে, হয়তো ইনস্টাগ্রামে আমার অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাবে – এবং হয়তো সে তার বাবা-মাকে দেখতে পাবে।”
মালদোভা, রোমানিয়া এবং বেলজিয়ামের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ পথ পালানোর পর অবশেষে ফ্রান্সের নিরাপদে পৌঁছায় পরিবারটি।
সাসা মাকোভি বলেন, যুদ্ধ এতটাই বেদনাদায়ক ছিল যে তিনি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। বাইরে হাঁটতে গিয়ে কোনো পাথরকে ল্যান্ডমাইন বলে ভুল করেন তিনি।
“ভিরা ভালো আছে। কি হচ্ছে তা বোঝার জন্য সে খুব ছোট। সে আমার কাছ থেকে কিছুটা হয়তো অনুভব করতে পারে, কিন্তু সে বোঝার জন্য খুবই ছোট। আমি তার বয়স নিয়ে সত্যিই খুশি। সত্যিই খুশি। এ বয়সে এতোটা ভয়াবহতা তাকে বুঝতে হলো না!”