গতকাল একটি হৃদয়বিদারক সংবাদে সব মানুষের হৃদয়াবেগ ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। রাজধানী ঢাকার একটি নামকরা স্কুলের শিক্ষার্থীর আত্মহননের সংবাদ।
ঘটনাটির শুরু ক্ষুদ্র বিষয় থেকে। যে কোনো স্কুল কলেজের একটি সাধারণ ঘটনা। পরীক্ষার সময় এক ছাত্রীর নিকট মোবাইল পাওয়া গিয়েছে। স্কুলের প্রভাতী শাখার প্রধান শিক্ষক মেয়েটির বাবা মাকে ডেকে এনে তার বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগ তোলেন। ঘটনাটি এখানেই শেষ হতে পারত বা ভিন্নভাবে এই ঘটনার একটা সুষ্ঠু সুরাহা হতে পারত।
কিন্তু ঘটে গেছে একটি অনাকাঙ্খিত দুঃখজনক ঘটনা। মেয়েটিকে টিসি দেয়া হবে বলে ঐ শিক্ষিকা ছাত্রীর বাবাকে অপমান করেন বলে অভিযোগ। পরে ভিকারুননিসা স্কুলের ঐ ছাত্রী বাসায় আত্মহত্যা করে।
হাইকোর্ট ঘটনার তদন্ত করতে বলেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি করেছে। সামাজিক মাধ্যমও সরব। স্কুলে শিক্ষামন্ত্রী গিয়ে বিক্ষুদ্ধ অভিভাবকদের আশ্বাস দেন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের।
এরকম ঘটনা বা তার তদন্ত বা একটি অস্থায়ী সমাধান কোন চিরস্থায়ী সমাধান নয়। হঠাৎ করে এই ঘটনা ঘটেনি।
বাংলাদেশের বিদ্যমান সামজিক বাস্তবতায় সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনাচার অযাচার আসাম্য আচরণের সমস্যা প্রকটভাবে বিদ্যমান। তার ভেতর শিক্ষা ব্যবস্থা একটি। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন দরকার। এভাবে প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে ছাত্রছাত্রীদের বা তাদের সামনে তাদের অভিভাবকদের অপমানজনক ভাষায় কথা বলা একটি গর্হিত কাজ। কোন ছাত্রছাত্রী অপরাধ করলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেই শিক্ষার্থীকে কাউন্সেলেসিং করতে পারে। তাকে সময় দিতে পারে কিংবা তার সঙ্গে মানবিক আচরণ করে তার ভুল শোধরাতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই মানুষ তার প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করে। পড়াশোনা ছাড়া শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্যও তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। ভিকারুননিসা স্কুলেরও পড়াশোনা ছাড়া আলাদাভাবে কোন কিছু শেখানো হয় না। গুরুত্ব দেয়া হয় শুধু পড়া আর পরীক্ষাকে। দেশের সব স্কুলের অবস্থা একইরকম।
এখন বাণিজ্যিক কারণে শিক্ষার আসল প্রবণতা নষ্ট হয়ে গেছে। বাণিজ্যিক মানসিকতা গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। দেশের শিক্ষানীতিতে এইসব বাণিজ্যিক প্রবণতা দূর করে দেশের সকল শিক্ষার্থীকে তাদের সুকুমার মনোবৃত্তিকে পরিচর্যা করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বাণিজ্যিক মানসিকতা আইন করে দূর করতে হবে। নতুবা অরিত্রির মত আরো অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীকে অকালে ঝরে যেতে হবে যা কারো কাম্য নয়।