পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) বাতিলের প্রস্তাবে অনুমোদন না দিয়ে সোমবার গতবারের মতো এ বছরও পঞ্চম এবং অষ্টম দুই শ্রেণিতেই সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা দেয় মন্ত্রিপরিষদ। এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষাবিদসহ সাধারণ মানুষ।
এ ব্যাপারে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ময়মনসিংহের সাখুয়া আদর্শ বিদ্যানিকেতনের সহকারি প্রধান শিক্ষক হাসিম উদ্দিন আহমেদ।
স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন:
১
মাত্র কয়েকদিন আগেই মাননীয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বেশ উৎফুল্ল কণ্ঠে জানিয়েছিলেন, এ বছর থেকেই পিইসি উঠে যাচ্ছে। শিক্ষানীতি অনুযায়ী অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার সিদ্ধান্ত হওয়ায় এখন থেকে অষ্টম শ্রেণি শেষে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা অর্থাৎ পিইসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
সরকারের এমন সিদ্ধান্ত অভিভাবক ও শিক্ষাবিদসহ সুধী মহলে বেশ প্রশংসিত হয়। সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরাও এই খবর জানার পর হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। কচি বয়সে এত বড় আয়োজনে পরীক্ষা নামীয় যুদ্ধ জয়ে তাদের আর অবতীর্ণ হতে হবে না, এই ‘সুসংবাদ’ বাচ্চাদের আনন্দে আত্মহারা করে তোলে। অভিভাবকরাও অকারণ টেনশন ও বাড়তি চাপমুক্ত হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।
২
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে উপরিউক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে পূর্বতন নিয়মেই পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু রাখার পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম জানান, পঞ্চম শ্রেণির পরিবর্তে অষ্টম শ্রেণিতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেনি। বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাবটি আরও পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, শিক্ষার স্তর পরিবর্তনের এই বিশাল কর্মযজ্ঞ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তীতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কারণ এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে অবকাঠামোগত, শিক্ষক নিয়োগ, প্রশিক্ষণসহ অনেক ধরণের কর্মকাণ্ড জড়িত। তাই আগের মতোই পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ও অষ্টম শ্রেণিতে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
৩
পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা নিয়ে সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্তে দেশের বিপুল সংখ্যক ছাত্র অভিভাবক এবং সুধী সমাজের অনেকেই এখন হতাশ। যারা শিশুদের গিনিপিগ বানানোর বিপক্ষে, তাদের অনেক দিনের দাবি ছিল, পঞ্চম শ্রেণি শেষে পিইসি নামক যন্ত্রণা থেকে শিশুদের মুক্তি দেয়া। ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শেষে যখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে চাইলেন, মন্ত্রিপরিষদ তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ালো।
শিক্ষা ও শিক্ষানীতি নিয়ে এমন ছেলেখেলা সম্ভবত বাংলাদেশেই সম্ভব। একদিকে শিশুদের ঘাড়ে প্রতি বছর বইয়ের বোঝা বাড়িয়ে দেয়া আবার অন্যদিকে উদ্ভট পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে এদের মস্তিষ্কের বারোটা বাজানোর প্রজেক্ট যারা নেন, তাদের ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা যেহেতু এদেশে হয় না, তাই এসবে তাদের দুশ্চিন্তাও করতে হয় না।
বরং শিক্ষার উন্নয়নের নাম করে যত প্রজেক্ট দাঁড় করানো যায়, পকেট পুরো করার পথ তত সহজ হয়।
শিক্ষার নামে যত উৎপাত শুরু হয়েছে, এ থেকে উত্তরণ কবে, – কে জানে!
——————-
পাদটিকা: মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে মাননীয় মন্ত্রী যখন কোনো কথা বলেন, তা চূড়ান্ত বলেই সবাই গণ্য করে থাকেন। আমাদের এখানে যে যা পারে বলে দেয়, দায়িত্ব নিতে চায় না কেউ।