সনাতনী শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশ্বজুড়েই ‘ভালো’ করার চাপে থাকে কোমলমতি শিশুরা। কোথাও বেশি কোথাও কম। কিন্তু তথাকথিত সমাজ ব্যবস্থায় শিক্ষাক্ষেত্রে ফলাফল বা গ্রেডে মেধাবী বলে স্বীকৃতির প্রচলন আসলে কতটা নেতিবাচক সে দিকটি তুলে ধরেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক।
প্রতিনিয়ত স্কুল কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত মানে ছাত্র গড়ার চাপে থাকা এই শিক্ষক নিজের এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপের নিশ্চুপ চিৎকার তুলে ধরেছেন প্রভাবশালী গার্ডিয়ান পত্রিকায়।
খোলা চিঠিতে ওই শিক্ষক লিখেছেন,‘শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে ফলাফল নিশ্চিতের দায়িত্ব আমাকে দেয়া হয়েছে সেটা আমার কাছে অবাস্তব লাগে। শিশু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ওদের সর্বোচ্চ মেধা যাচাইয়ে বেধে দেয়া মান নিশ্চিত করতে গিয়ে এখন আমাকেও ওদের ওপর চাপ দিতে হচ্ছে। এই অল্প বয়সী শিক্ষার্থীদেরকে চাপে ফেললেও লাভ নেই কারণ আমাদের উচ্চাভিলাষী এই ‘মান’ অর্জন করা আদৌ কতটুকু সম্ভব প্রশ্নটা থেকেই যায়।’
এমন মানসিক চাপকেই স্বাভাবিক হিসেবে দেখার প্রবণতার সমালোচনা করে এই শিক্ষক লিখেছেন,‘ ভালো ফলাফল নিশ্চিত করাকেই যেন স্বাভাবিক হিসেবে দেখা দেখেন আপনারা। ভ্রুকুটি করে বলেন,“সব কিছু এভাবেই হয়”!’
তার মতে,‘এসব কারণেই এখন শিশুরা ভুগছে বিষাদগ্রস্থতায়,চরম হতাশায়।’
কিন্তু শিক্ষার্থীদের মানসিকতাকে পাশ কাটিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ কেবল সনাতনী ফলাফল দিয়েই সব বিচার করছে বলে অভিযোগ তার।
তিনি লিখেছেন,‘ মনকাড়া উপস্থাপন এবং পরিপাটি ক্লাসরুমের বাহ্যিক চাকচিক্যেই আপনাদের বেশি মনোযোগ। অথচ শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থাকে পাত্তাই দিচ্ছেন না।’
এর ফলে গোটা স্কুলের পড়াশোনার কাঙ্ক্ষিত পরিবেশই এখন হুমকিতে আছে। একেবারে কম বয়সী শিক্ষার্থীরাও এখন স্কুলের কর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছে। টিফিন এবং বিরতিতে স্কুলে চলছে তুমুল হট্টগোল।
পরিস্তিতি নিয়ে হতাশ এই শিক্ষক লিখেছেন,‘এগুলো নিয়ে আপনাকে একাধিকবার বললেও আপনি কর্ণপাত করছেন না। ইমেইল পাঠালেও জবাব দিচ্ছেন না। আসলে আমি আপনাদের ওপর ভরসা হারাচ্ছি। আপনারা ‘সিস্টেম’ নামের এমন এক ত্রুটিপূর্ণ মেশিনে আটকে গেছেন যেখানে স্কুলের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে আমরা শিক্ষক-কর্মীরা পর্যন্ত মানসিক ক্ষতির শিকার হচ্ছি।’