গত এক সপ্তাহ ধরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
সংগঠনটির সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেছেন, নেতৃত্বহীনভাবে চলছে এই আন্দোলন। অতএব যেকোনো সময় যেকোনো কুচক্রী ও স্বার্থান্বেসী মহল এতে ঢুকে পড়তে পারে। এ কারণে দেশের তথা সামগ্রিক অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই এখনি এর সুরাহা করা উচিত।
রোববার রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে তিনি এসব কথা বলেন।
এফবিসিসিআইর সভাপতি বলেন, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে দল-মত নির্বিশেষে সবার সাথে ব্যবসায়ীরাও প্রথম থেকেই নৈতিকভাবে সমর্থন করে আসছে। আন্দোলনের বিষয়টিকে ইতিবাচক ভাবে সমর্থন দিয়ে সরকার ছাত্রদের দাবি পূরণে বেশকিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিয়েছে। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আইন প্রণয়নসহ আরো কঠোরভাবে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
‘ব্যবসায়ীরা মনে করে, যে দাবি গণদাবিতে পরিণত হয় তা সরকার উপেক্ষা করবে কি না জানি না। আশাকরি জনগণ ক্ষিপ্ত হবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত সরকার নিবে না।’
তিনি বলেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু স্বার্থান্বেষি মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা অপপ্রচার ও গুজব ছড়াচ্ছে। ফলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির অবনতির সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। এক সপ্তাহের আন্দোলন ও বর্তমান পরিবহন ধর্মঘটে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা এ ধরনের ধর্মঘট বা আন্দোলনকে সমর্থন করেনি এবং করবে না। যেমন দূরপাল্লার যানবাহন এবং আওয়ামী লীগ অফিস ভাংচুরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যে সহিংসতা ঘটেছে তা কোন ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
ফিটনেসবিহীন কোনো গাড়ি রাস্তায় থাকা উচিত নয় উল্লেখ করে এফবিসিসি্আই সভাপতি বলেন, পরিবহন মালিকদের সাথে বসার উদ্যোগ নেয়া হবে। পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য তাদের আহ্বান জনাচ্ছি। তবে এই কয়দিনে অনেক গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। এতে পরিবহন মালিকেরা আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের বর্তমান রপ্তানি প্রবৃদ্ধি এবং র্যামিটেন্স প্রবাহ মন্দা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি সমুন্নত রাখা, রপ্তানি বাণিজ্য সচল রাখতে, বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে এ ধরনের অনাকাংখিত ঘটনা কোন ভাবেই কাম্য নয়। বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি, কর্মসংস্থান, স্থিতিশীলতার বিষয়কে বিবেচনায় রেখে বর্তমান পরিস্থিতির সুরাহা করা দরকার।
বন্দরগুলোতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ করে সংগঠনটি বলেছে, এতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এসব কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় মূল্যস্ফীতির হার আবারও বাড়তে পারে। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এছাড়া আন্দোলনের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে ইতোমধ্যে অনেক বিদেশী ক্রেতা বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছে।
আসন্ন কোরবানীর ঈদের আগে এ ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করলে দেশের সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যে হুমকিতের পড়বে। এ কারণে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস প্রদানে যেন ব্যত্যয় না ঘটে সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে অনুরোধ করেছে ব্যবসায়ীদের এই সংগঠন।