বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকসহ সব ধরণের নিয়োগে অধিকতর স্বচ্ছতার স্বার্থে গঠিত হতে যাচ্ছে ‘শিক্ষক নিয়োগ কমিশন’। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের আদলে শিক্ষক নিয়োগ কমিশন গঠনের কাজ শুরু করার স্বস্তির সংবাদটি ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
এতদ্বসংক্রান্ত সংবাদ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। শিক্ষার গুনগত মান বৃদ্ধি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সার্বিক শৃঙ্খলার স্বার্থে এই উদ্দ্যোগ আরো আগেই নেয়া উচিত ছিল। এর পরেও বলা যায়, লেইট বেটার দ্যান নেভার…..
পাশাপাশি আরো একটি বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি দেওয়া উচিত বলে অনেকেই মনে করেন। সেটি হল, বেসরকারি স্কুল কলেজ পরিচালনা কমিটির বর্তমান বিধিমালায় বিদ্যমান পরিস্থিতি। বিধিমালায় গঠিত পরিচালনা কমিটির ‘ক্ষমতা’র বিষয়টি অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চরম বিশৃঙ্খলার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ম্যানেজিং কমিটির হাতে শিক্ষক-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করার প্রবিধান। তাছাড়া, কমিটির সভাপতির প্রতি স্বাক্ষরে শিক্ষক-কর্মচারীর সরকারি অংশের বেতন ভাতা উত্তোলন করার নিয়ম। দেখা যায়, প্রচলিত এই নিয়মটি প্রায়ই অনিয়মের শিকার হয়। প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও সভাপতির দ্বন্দ্বে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতার বিল ফরমে প্রতিস্বাক্ষর না করার কারণে বেতন ভাতা উত্তোলন না করতে পারার ঘটনা মোটেও কম নয়। যেহেতু, অধিকাংশ সভাপতি স্থানীয় এমপির ডিও লেটার ও রাজনৈতিক বিবেচনায় নির্বাচিত/মনোনিত হন, তাই তারা প্রত্যেকেই নিজেকে ‘বিশাল ক্ষমতাধর’ একজন মনে করেন এবং রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি দেখিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যা ইচ্ছে তাই করার অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করেন। এ ধরণের ‘পাওয়ারফুল’ সভাপতির চরম স্বেচ্ছাচারিতায় বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত বিব্রতকর ও নাজুক পরিস্থিতি বিরাজমান।
শুধুমাত্র রাজনৈতিক পরিচিতিই যাদের সভাপতি হওয়ার যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি, তাদের সাথে একজন হেডমাস্টার কিংবা প্রিন্সিপাল আইন বাতলিয়ে পেরে উঠবেন সে আশা করা বাতুলতা! এই বাস্তবতায় প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে কমিটি প্রধানের চিরায়ত দ্বন্দ্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ-পরিস্থিতি অনেক আগেই শিকেয় উঠেছে। এর পরিত্রাণ প্রয়োজন।
এজন্য বিদ্যমান আইনের বাস্তবভিত্তিক সংশোধন প্রয়োজন। শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরিচ্যুতি ও বেতনভাতার উপর খবরদারির বিষয়টি অমানবিক বিবেচনায় নিয়ে এই ধারাটি বিদ্যমান নীতিমালা থেকে বাতিল করা ছাড়া বিকল্প নেই। তাছাড়া, স্কুলের আর্থিক ও নিয়োগের বিষয়টি সম্পূর্ণ সরকারের এখতিয়ারে থাকা উচিত। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যেকোনো সূত্রে অর্থ প্রাপ্তির সুযোগ বন্ধ হলে ধান্ধাবাজ ধরণের মানুষেরা কখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটিতে আসবে না, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। রাজনৈতিক নেতাদের বিশেষকরে ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বশীল নেতাদেরও উচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিছক রাজনৈতিক যোগ্যতায় কাউকে কমিটিতে নেওয়ার চাপাচাপি বা জোরাজোরি না করা।
শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড হিসেবে প্রকৃত অর্থেই মেনে নিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হবে। তাই, প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিদ্যমান বিশৃঙ্খল পরিবেশ পরিস্থিতির প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করে, তার প্রতিকারে প্রয়োজনীয় উদ্দ্যোগ গ্রহণ করা। এবং সেটা শীঘ্রই…..
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)