চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

শিক্ষকের গলায় নোবেল পদক পরিয়ে দিয়ে বললেন, এ পুরস্কার আপনার

পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানী প্রফেসর আব্দুস সালাম নোবেল পুরস্কার পান ১৯৭৯ সালে। মুসলিমদের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়, প্রথম নোবেল পান মিসরের প্রেসিডেন্ট আনওয়ার সাদত। প্রফেসর সালাম একা নন, সেই বছর পদার্থবিজ্ঞানে তার সহযোগী ছিলেন Sheldon Lee Glashow ও Steven Weinberg। তাদের বিষয় ছিল theory of the unified weak and electromagnetic interaction between elementary particles, including, inter alia, the prediction of the weak neutral current. এই দু’জনই যুক্তরাষ্ট্রের যথাক্রমে বস্টন ও টেক্সাস ইউনিভার্সিটির প্রফেসর।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৮১ সালে প্রফেসর আব্দুস সালামকে দেবপ্রসাদ সর্বাধিকারী স্বর্ণপদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তাকে আমন্ত্রণ জানায়। তিনি অসম্মতি জানিয়ে লিখেন, যে বিশ্ববিদ্যালয় তার কৃতি শিক্ষককে কোনোদিন সম্মানিত করেনি, তাদের কাছ থেকে তিনি পুরস্কার নিতে অপারগ।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বিপদে পড়ে যায়, প্রফেসর সালামের শিক্ষককে তারা চেনেন না- জানেন না, তিনি বেঁচে আছেন কিনা তাও জানেন না। তারা ব্যর্থ হন সেই শিক্ষকের খোঁজ পেতে।

তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। প্রফেসর আব্দুস সালাম তাকে চিঠি লেখেন। প্রশাসন খুঁজে বের করে মি. গঙ্গোপাধ্যায়কে।

প্রফেসর আব্দুস সালামের এই শিক্ষকের নাম অনিলেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯১৫ এবং ১৯১৮ সালে যথাক্রমে গণিত ও ফলিত গণিতে মাষ্টার্স ডিগ্রী নেন। তৎকালীন বঙ্গদেশে চাকরি না পেয়ে তিনি চলে যান লাহোরে।

সেখানে আর্যসমাজ প্রতিষ্ঠিত সনাতন ধর্ম কলেজ লাহোরে অঙ্কের অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন। অল্পদিনেই ভাল শিক্ষক হিসাবে তার সুনাম ছড়িয়ে পরে। অঙ্ক নিরস বিষয়, কিন্তু তার ক্লাসে কোনো ছাত্র অনুপস্থিত থাকত না, এমনই ছিল তার ক্লাসের আকর্ষণ। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর কলেজটি লাহোর থেকে উঠিয়ে ভারতের আম্বালায় নিয়ে আসা হয়।

প্রফেসর আব্দুস সালামঅনিলেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়র খোঁজ পাবার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক অনিলেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়কে Eminent Teacher Award সম্মানে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং প্রফেসর আব্দুস সালামকে আমন্ত্রণ জানানো হয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার। চিরকুমার অনিলেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় তখন অসুস্থ এবং কলকাতায় তার আত্মীয়ের বাড়িতে বিছানায় শয্যাশায়ী। তাকে সম্মানিত করার সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গী হন প্রফেসর আব্দুস সালাম। শয্যাশায়ী শিক্ষকের কাছে উপস্থিত হলে প্রফেসর সালাম পকেট থেকে তার নোবেল পদক বের করে প্রিয় শিক্ষকের গলায় পরিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আপনার কাছে অঙ্ক শিখেছিলাম বলেই আমি এতদূর আসতে পেরেছি। স্যার এ পুরস্কার আমার নয়, এটা আপনার।’

শিক্ষক ও ছাত্রের সম্পর্ক দেশ-কাল-ধর্মের ওপর নির্ভর করে না, শিক্ষকের সম্মান অনেক উপরে এবং অপার্থিব। প্রফেসর আব্দুস সালাম তার কলেজ শিক্ষক অনিলেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়কে যেভাবে ও যে সম্মান জানালেন তা এক বিরল ঘটনা।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)