পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনে বাংলাদেশের ইতিহাস, নিদর্শন, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির নানা বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এ ভবন বাংলাদেশ নিয়ে গবেষণার পাশপাশি বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে শিক্ষা সহযোগিতা বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন নীতিনির্ধারকরা।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ নিয়ে গবেষণা এবং দেশের শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরতে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
২০১১ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকীর স্মারক হিসেবে শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের ইচ্ছে প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দোতলা বাংলাদেশ ভবনের মোট আয়তন ৪৪ হাজার বর্গফুট। ভবনের নিচতলায় দুটি অংশ রয়েছে। এতে ৪শ’ ৫৩ আসনের একটি আধুনিক মিলনায়তন রয়েছে। নৌকার ‘ছৈ’-এর আদলে করা হয়েছে মিলনায়তনের ছাদ। সেখান থেকে শান্তিনিকেতনের নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে।
নিচতলার উত্তর দিকে ১শ’ ৬০ আসনের দুটি সেমিনার হল আছে। ভবনের নিচতলায় দক্ষিণ পাশে রয়েছে ৩ হাজার বর্গফুটের ডিজিটাল জাদুঘর। এ জাদুঘর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতির নিদর্শন দিয়ে সাজানো হয়েছে। এখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিলাইদহ, পতিসর ও শাহজাদপুরে ব্যবহৃত সামগ্রী রয়েছে।
শুরু হয়েছে উয়ারি বটেশ্বরে প্রাপ্ত ২৫০০ হাজার বছর পুরনো সভ্যতার নিদর্শন দিয়ে। শেষ হয়েছে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ দিয়ে। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলির মধ্যে উয়ারি বটেশ্বরে প্রাপ্ত প্রত্ন নিদর্শন যেমন আছে, তেমনই আছে ৬ষ্ঠ-৭ম শতকের পোড়ামাটির কাজ, ১৬শ শতকের নক্সাখচিত ইট প্রভৃতি। অাছে পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়ের নানা নিদর্শন, দেবদেবীদের মূর্তি। কোনটা পোড়ামাটির, কোনটি ধাতব। মাঝখানে সুলতানি এবং ব্রিটিশ শাসনামলও এসেছে জাদুঘরটিতে রাখা নানা প্যানেলে। আছে ঢাকার জাতীয় জাদুঘর থেকে আনা বেশ কিছু মুদ্রা।
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে রয়েছে সম্পূর্ণ পৃথক একটি বিভাগ। পূর্ববঙ্গে সাজাদপুর, শিলাইদহ, পতিসরের কাছারীবাড়ির ছবি, সেখানে কবির ব্যবহৃত নানা জিনিষের অনুকৃতি দিয়ে সাজানো রয়েছে জাদুঘরের এই অংশটি। এক হাজার ৩শ’ বর্গফুটের লাইব্রেরিতে বাংলাদেশের ইতিহাস, সাহিত্য ও গবেষণাসহ নানা ধরনের বই রয়েছে।
বাংলাদেশ ভবনের মাধ্যমে দু’ দেশের সংস্কৃতির যোগাযোগ আরো বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
সবার আশা, আধুনিক সব সুবিধা নিয়ে দু’ দেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির বিকাশ এবং বন্ধুত্ব সুদৃঢ় করবে বাংলাদেশ ভবন।