বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত প্রাবন্ধিক সাহিত্য সমালোচক শান্তনু কায়সার ১২ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেট শর্টফিল্ম ফোরাম মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় স্মরণ সভা। এর আয়োজক ছিল বইনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। এতে অংশ নেন প্রাবন্ধিক আহমদ মাজহার, সাংস্কৃতিকর্মী আশরাফ সিদ্দিকি, শিক্ষাবিদ মোরশেদ হাসান, লেখক শাখাওয়াত টিপু প্রমুখ।
শান্তনু কায়সারকে স্মরণ করতে গিয়ে আহমেদ মাহজার বলেন, ‘শান্তনু কায়সার বাংলার মাটি থেকে জন্ম নেওয়া লেখকদের স্বরূপ সন্ধান করেছেন। গতানুগতিক নাট্যধারার বাইরে ভেবেছেন। মননশীল কবিসত্বা দিয়ে নজরুলকে সজীব ও সেরা সৃষ্টিশীল মানুষ হিসেবে দেখিয়েছেন। তিনি সৎ ও স্বনিষ্ঠ ছিলেন। আর আমাদের সমাজে সৎ ও স্বনিষ্ঠ মানুষের কদর কমছে। শান্তনু কায়সার ও প্রাপ্য কদর পাননি।’ ঢাকামুখী লেখকদের জোয়ারে গা না ভাসিয়ে শান্তনু কায়সার কুমিল্লায় থেকে সাহিত্য চর্চা করেছেন। যা বাংলা সাহিত্যে বিরল বলে মনে করেন আহমদ মাজহার।
আশরাফ সিদ্দিকি বলেন, ‘শান্তনু কায়সার ছিলেন আপাদ মস্তক সাহিত্য সমালোচক। বাংলা সমালোচনা সাহিত্যে তার অবদান এত বেশি যে বলে বোঝানো যাবে না। সুধিবাদীদের পক্ষে না থাকায় তাকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি।’
লেখক শাখাওয়াত টিপু বলেন, ‘শান্তনু কায়সার সমাজ সচেতনতার জায়গা থেকে সাহিত্যকে দেখতেন। সমাজের অন্তর্গত রূপ থেকে সাহিত্যকে বের করে আনার চেষ্টা করেছেন আজীবন। তিনি চেয়েছিলেন সমাজও তার মতো করে মানুষকে দেখুক। তার নাটকে, গল্পে, প্রবন্ধে গ্রামের সাথে শহরের যোগসূত্র লক্ষ করা যায়।
শান্তনু কায়সার চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাচানামেঘ গ্রামে ১৯৫০ সালের ৩০ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সিরাজুল হক ও মা মাকসুদা খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষে অধ্যাপনা শুরু করেন। বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শেষে অবসরের পর তিনি কুমিল্লা নগরীতে বসবাস করতেন। অবসর সময়টা তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। শান্তনু কায়সারের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৪৫টি। জীবনের বিভিন্ন সময় তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজ, জামালপুর জাহেদা সাফির মহিলা কলেজ, লক্ষ্মীপুর চর আলেকজান্ডার কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া অধ্যাপনা করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। শওকত ওসমান, বঙ্কিমচন্দ্র, তৃতীয় মীর তার উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ।
ছবি : সাকিব উল ইসলাম