সী প্লেন বানানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে পটুয়াখালীর এক তরুন শিক্ষার্থী। নিজস্ব ধারণা থেকে দীর্ঘ ছয় মাস প্রচেষ্টা চালিয়ে জেলার কলাপাড়া উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের মাহবুবুর রহমান শাওনের তৈরি প্লেন সাদৃশ্য ঐ বাহনটি বাড়ির পাশের গাববাড়িয়া নদীতে পরীক্ষামূলক চালানো হচ্ছে। এখন আকাশে ওড়ানোর জন্য চলছে নিবিড় পর্যবেক্ষন ও পরীক্ষামূলক কারিগরি সংযোজন।
১৮ বছরের তরুন শাওনের নিরলস প্রচেষ্টা, সাফল্যের অগ্রগতি ও উদ্ভাবনী দক্ষতায় বিস্মিত এলাকাবাসী। কথিত সেই ‘সী-প্লেন’ দেখতে প্রতিদিন তার বাড়ীতে হাজারো মানুষের ছুটে চলা যেন এক রুপ কথার গল্প। এ নিয়ে এখন চায়ের কাপে ঝড় তুলছে স্থানীয়রা।
লম্বায় ৭ ফুট, পাশে ১০ ফুট, উচ্চতায় ৫ ফুট আকারের ওই সী-প্লেনের চেচিসে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যালুমিনিয়ামের পাত দিয়ে মোড়ানো ককশিট। তার উপরেই অ্যালুমিনিয়ামের মোটা পাইপ, কাঠ, মোটা গুনা,নাইলন সুতা দিয়ে পুরো কাঠামো তৈরি করে ওড়ার জন্য দু’পাশে মোটা কাপড় ও পলিথিনের ওপড়ে নেট দিয়ে মোড়ানো প্যারাসুটের ন্যায় পাখা বানানো হয়েছে।
১২ ভোল্ট ব্যাটারীর সুইজে সয়ংক্রিয় চালু হওয়া পেট্রোল জ্বালানির ১০০ সিসি মোটর সাইকেলের ইঞ্জিনের সাথে বৈদ্যুতিক পাখার প্রপেলর বসিয়ে বানানো হয়েছে প্লেনের ইঞ্জিন। শব্দ নিয়ন্ত্রনের জন্য ব্যবহার হয়েছে মোটর সাইকেলের সাইলেন্সার। এতে এ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। পাইলটসহ প্লেনটির ওজন প্রায় ৮০ কেজি। পরীক্ষামূলক এই প্রযুক্তি সফল হলে টেকসই উন্নত প্রযুক্তি সংযোজনের চিন্তা রয়েছে । সরকারি-বেসরকারি কোনো সহায়তা পেলে প্লেনটি আকাশে উড়াতে চায় শাওন।
মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের নাসির উদ্দিন খানের দু’ছেলের মধ্যে শাওন বড়। ২০১২ সালে মহিপুর কো-অপারেটিভ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১৪ সালে কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে বর্তমানে সে বরিশাল আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনিষ্টিটিউটের ইলেকট্রিকাল বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
মহিপুর বন্দরের রহমত উল্লাহ দেওয়ান শাওনের তৈরি প্লেন দেখতে এসে বলেন, ‘কয়দিন ধইরা প্লেন বানানোর কতা হুনি। আইজগো দেখতে আইলাম। পোলাডায় মাথা খাডাইয়া ভালো একখান কাম করছে।’
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামের নুরুন্নাহার বেগম বলেন, ‘আমি প্লেন বানানের কতা হুইন্যা ছোট্র নাতিডারে লইয়া আইছি। ভালোই তো বানাইছে, এ্যাহন ওড়তে পারলেই অয়।’
গ্রামের প্রতিবেশী মো.ইসমাইল সিকদার বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই ছেলেটা বিজ্ঞান মনস্ক। প্লেন বানানোর কাজ শুরু করার পর আমি প্রায় সময়ই দেখতে আইতাম। দোয়া করি অর কাজটা যেন সফল হয়।’
এ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পুরণ না হওয়ায় নিজে নিজে কিছু তৈরি করার পরিকল্পনা থেকে এর আগে মোবাইল ফোন দিয়ে চোরের উপস্থিতি বোঝার জন্য ‘ সিকিউরিটি এলারাম সার্কিট’ তৈরি করে ব্যাপক আলোচনায় আসে শাওন।