চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

শাইখ সিরাজের ‘খুনসুটি’

৭ সেপ্টেম্বর শাইখ সিরাজের জন্মদিন

রাজধানীর জাহাঙ্গীর গেইট। ক্যান্টনমেন্টের প্রবেশপথ। বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরী কমিশন-বিটিআরসি’র সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদেরের মেয়ের বিয়ে সেনাকুঞ্জে। চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ সেনাকুঞ্জে যাওয়ার জন্য জাহাঙ্গীর গেইটে। তার পাজেরো জীপ গাড়িতে চ্যানেল আইয়ের স্টিকার। সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা মিলিটারি পুলিশ (এম.পি) তার গাড়ি আটকালো।

মিলিটারি পুলিশ: স্যার, আসসালামুআলাইকুম।
শাইখ সিরাজ: ওয়ালাইকুম সালাম।

এম.পি: মিডিয়ার স্টিকার লাগানো গাড়ি তো যাবে না।
শাইখ সিরাজ: স্টিকার খুলে নিয়ে তারপর যাই (দুষ্টুমিপূর্ণ)।

এম.পি: সেটা হলে আর কোনো সমস্যা নেই স্যার।
শাইখ সিরাজ: স্টিকার খুললেও তো এটা মিডিয়ার গাড়ি এবং আমি শাইখ সিরাজই থাকবো!

এম.পি: হ্যাঁ, এটাও তো একটা সমস্যা স্যার!
শাইখ সিরাজ: তাহলে সমাধান কি? বিয়েতে যাবো না!
এম.পি: কিংকর্তব্যবিমূঢ়!

২.
স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে গ্রাম, কৃষি ও কৃষকদের সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে চ্যানেল আইয়ের অনুষ্ঠান ‘ফিরে চল মাটির টানে।’ ভোরে মুন্সিগঞ্জে গিয়ে শুটিং শেষে ঢাকা ফিরছেন শাইখ সিরাজ। টিম মাইক্রোবাসের সম্মুখ সিটে তিনি বসা। মুন্সিগঞ্জ মোড়ে গাড়ি যানজটে আটকালো। হঠাৎ জানালার বাইরে থেকে এক লুঙ্গি পরিহিত লোক জানালার কাঁচে আঙ্গুল দিয়ে নির্দেশ করে কৌতুহলী দৃষ্টিতে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এই আপনে কে যেনো? আর বলো না বলো না?’ বুঝাই যাচ্ছে লোকটি কিছুটা হতবিহ্বল। এত পরিচিত একজন মানুষ যাকে প্রতিদিন টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায় তাকে এত কাছ থেকে দেখতে পাবেন ভাবেনি। অতি উচ্ছ্বাসে নামই ভুলে গেছে।

গাড়ির কাঁচের গ্লাস কিঞ্চিৎ নামিয়ে হতবিহ্বল মানুষটিকে ভদ্রতার সাথে শাইখ সিরাজ বললেন, অভিনেতা ‘আফজাল হোসেন।’
লোকটির স্তব্ধভাব গেলো মনে হলো না। যানজট ছুটে গেছে। গাড়ি চলতে শুরু করলো।

৩.
রুয়ান্ডা। সদ্য গৃহযুদ্ধ থেকে উত্তরণ হওয়া দেশ। দেশটির দুই সম্প্রদায় হুতু ও তুতসির মধ্যে জাতিগত দাঙ্গায় দেশটির বেশিরভাগ মানুষ বিপদগ্রস্ত হয়েছিলো। নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে ছিলো তুতসিরা। একবিংশ শতকের শুরুতে জাতিসংঘের মধ্যস্ততায় নিশ্চিহ্ন প্রক্রিয়ার অবসান হয়ে শান্তি পর্ব শুরুর হয়। দেশটির কৃষি ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে যাওয়ার জন্য শাইখ সিরাজ তার টিম নিয়ে ঢাকার শাহজালাল (র.) আন্তজার্তিক বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশনে।

ইমিগ্রেশন অফিসার: স্যার, কেমন আছেন?
শাইখ সিরাজ: ভালো।

ই. অ.: আপনি কোথায় যাবেন স্যার?
শাইখ সিরাজ: রুয়ান্ডা।

ই.অ.: স্যার ওটা রুয়ান্ডা না উগান্ডা!
শাইখ সিরাজ: না ভাই আমি রুয়ান্ডা যাচ্ছি।

ই. অ.: না স্যার ওরা ভুল করেছে, দেশটি উগান্ডা হবে।
রীতিমতো কনফিউজড হওয়ার মতো অবস্থা।
শাইখ সিরাজ: ভাই যা আছে তাতেই সিল মারেন। আমি রুয়ান্ডা যাচ্ছি। তুমি উগান্ডার সিল মেরে দিয়ো না। পরে রুয়ান্ডা পোর্টে আমাকে আটকে রাখবে। ভাই জানি না তো রুয়ান্ডার ইমিগ্রেশন জেল কেমন। ওখানে তো আর শাইখ সিরাজের ভাব নিয়ে পার হতে পারবো না। হা হা হা।
ই.অ.: ঠিক আছে স্যার। আপনার উগান্ডা সফর ভালো হোক।

বাংলাদেশের কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ। তার কথার মধ্যে সবসময় ভরা থাকে অসংখ্য গ্রামীণ কৌতুক ও খুনসুটি। এসব আলাপের মধ্য দিয়ে তিনি সাধারণ খেটে খাওয়া কৃষককূলের খুব আপন হয়ে যান।

শাইখ সিরাজ-জন্মদিন-কৃষি-স্বপ্নরাজধানী থেকে গিয়ে গ্রামীণ কৃষক, কৃষি ও প্রান্তিক মানুষের হৃদয়ের একজন হয়ে তাদের মনের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করা চাট্টিখানি কথা নয়। আবার তাদের কথা শহুরে মানুষের ভাষায় টেলিভিশনে প্রচার করতে হয়। উভয়মুখী এই কার্যক্রম গত তিনটি দশক ধরে প্রার্থনা আকারে করে যাচ্ছেন একজন শাইখ সিরাজ। টেলিভিশনের পর্দার শাইখ সিরাজ যেমন নিখুঁত, স্পষ্ট এবং কৃষক কোমলতার প্রতিভূ, টেলিভিশনের বাইরের তিনি একইভাবে অনেক বেশি অনানুষ্ঠানিক, গ্রামীণ সরলতা ও কৌতুকপূর্ণ আলাপে সপ্রতিভ। অনেক বেশি বন্ধুবৎসল ও আন্তরিক বলে প্রায় তার সহকর্মীরা ভ্রম করেন তিনি সহকর্মী নাকি বস।

শুভ জন্মদিন শাইখ সিরাজ। আপনি দীর্ঘজীবী হোন।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)