চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

শহীদ মিনার ভাঙার সমর্থক জামায়াতের ২১ ফেব্রুয়ারি ‘পালন’

‘ভাষা আন্দোলন করা ভুল ছিল’ বলে মনে করে একুশের স্মৃতি বিজড়িত শহীদ মিনার ভাঙার সমর্থন করেছিল যেই রাজনৈতিক দল, যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত সেই জামায়াতে ইসলামী মহান একুশে ফেব্রুয়ারি কথিতভাবে পালন করেছে। এ উপলক্ষে সবার উদ্দেশে বিবৃতিও দিয়েছে তারা।

চলতি বছরের একুশে ফেব্রুয়ারি সামনে রেখে বিবৃতি দিয়েছেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। বিবৃতিতে তিনি বলেন: ২১ ফেব্রুয়ারির মহান শহীদদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা লাভ করেছে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য যারা শহীদ হয়েছেন জাতি তাদের চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। ভাষা আন্দোলনের মহান শহীদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এবং তাদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করছি।

জামায়াতের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমীর মহান শহীদদের কথিত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করলেও ১৯৭০ সালে দেশের এই মহান আন্দোলনকে ‘ভুল’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন দলের সাবেক আমীর মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত গোলাম আযম।

১৯৭০ সালের ১৯ জুন প্রকাশিত ‘দৈনিক পাকিস্তান’ পত্রিকার সংবাদে বলা হয়: পশ্চিম পাকিস্তানের শুক্কুরে ১৮ই জুন (১৯৭০) এক সংবর্ধনা সভায় জামায়াত নেতা গোলাম আযম বলেন, উর্দু পাক-ভারত উপমহাদেশের মুসলমানদের সাধারণ ভাষা। অথচ ৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় তিনিও তাতে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু তা ভুল হয়েছিল।

পরেরদিন সেই বিষয়ে একটি লেখা প্রকাশিত হয় দৈনিক আযাদ পত্রিকাতেও। সেখানে তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়: মুসলমানদের অধিকাংশ তমদ্দুন ও ধর্মীয় জ্ঞানের ভাণ্ডার উর্দু ভাষায় সংরক্ষিত আছে। বাংলা ভাষা আন্দোলন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দৃষ্টিকোণ থেকে মোটেই সঠিক কাজ হয়নি।

অবশ্য ভাষা আন্দোলনকেই নয়, বরং ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রতীক শহীদ মিনারকেও গুঁড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে ছিলেন গোলাম আযম। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রথম দিকেই যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শহীদ মিনারটি গুঁড়িয়ে দেয়, তখন সেই ঘটনাকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন গোলাম আযম।

তার বরাতে ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকার ১৯৭১ সালের ১৬ জুলাই সংখ্যার সম্পাদকীয়তে লেখা হয়: ‘আইয়ুব খানের গভর্নর আজম খান ছাত্রদের খুশি করার জন্য যে শহীদ মিনার তৈরি করলেন তাকে পূজামণ্ডপ বলা যেতে পারে, কিন্তু মিনার কিছুতেই না। যাই হোক, সেনাবাহিনী সেই কুখ্যাত মিনারটি ধ্বংস করে সেখানে মসজিদ গড়ে শহীদদের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শনের চেষ্টা করেছেন জেনে দেশবাসী খুশি হয়েছে।’

১৯৪৮ সালে লিয়াকত আলি খানের ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কিত আন্দোলন যখন পুনরায় দানা বেঁধে ওঠে, সেই মূহুর্তে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ঢাবির জিমনেসিয়াম মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের একটি সমাবেশ আয়োজন করা হয়; যাতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার পাশাপাশি বাংলা ভাষা সম্পর্কিত দাবি ও ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ এসেম্বলিতে (ইবিএলএ) গৃহীত প্রস্তাবের পূর্ণ বাস্তবায়ন করার বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত রেখে একটি দাবিনামা প্রস্তুত করা হয়। এই দাবিনামাটি তৈরি করেন আব্দুর রহমান চৌধুরী; যেটি চূড়ান্ত করার কাজে জড়িত ছিলেন কাজী গোলাম মাহবুবসহ ‘স্টুডেন্টস একশন কমিটি’র নেতৃবৃন্দ।

নিয়মানুসারে দাবিনামাটি পাঠ করার কথা ছিলো ডাকসুর তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) অরবিন্দ বোস এর; কিন্তু তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত ভাষা আন্দোলনের দাবি সংবলিত মানপত্রটি একজন হিন্দু ছাত্রকে দ্বারা পাঠ করালে তার মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে এবং মুসলিম লীগ সরকার এ নিয়ে নানা প্রকার প্রচারণা শুরু করবে– এই আশংকায় দাবিনামাটি পাঠের দায়িত্ব দেওয়া হয় ডাকসু’র তৎকালীন জেনারেল সেক্রেটারি (জিএস) গোলাম আজমকে।

কিন্তু ভাষা আন্দোলন পরবর্তী সময়ে তো বটেই এরও অনেক আগে ১৯৪৮ সালেই নিজের বাংলা বিরোধী অবস্থান জানিয়েছিলেন গোলাম আযম। সেই গোলাম আযমের দলের পক্ষ থেকেই এখন শহীদদের স্মরণ করার কথা বলা হচ্ছে!