শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা জজকোর্টের সরকারি কৌশলী (পিপি) অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান এবং তার ছোট ভাই মনির হোসেনকে হত্যা মামলার দীর্ঘ ২০ বছর পর ৬ জনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এছাড়াও ৪ জনকে যাবজ্জীবন এবং ৩ জনকে ২ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এই মামলার বাকি ৩৯ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেন বিচারক।
বাসস জানায়, রোববার দুপুরে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. শওকত হোসাইন এই রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন- শাহিন কোতোয়াল, শহীদ কোতোয়াল, শফিক কোতোয়াল, শহীদ তালুকদার, মজিবুর রহমান তালুকদার ও সলেমান সরদার।
আসামি সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদার, বাবুল খান, ডাবলু তালুকদার ও রশিদকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করা হয়।
এ মামলায় মন্টু তালুকদার, আসলাম সরদার ও জাকির হোসেন মজনু সরদারকে ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একজন আসামি মৃত্যুবরণ করায় বাকি ৩৯ জন আসামি নির্দোষ প্রমাণ হওয়ায় বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়।
এ মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামী শহীদ তালুকদার, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত বাবুল তালুকদার ও ২ বছর কারাদণ্ড প্রাপ্ত মজনু সরদার পলাতক রয়েছে। রায়ের দিন সকাল থেকে কড়া পুলিশ প্রহরায় ছিল আদালত প্রাঙ্গন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০১ সালের ৫ অক্টোবর শরীয়তপুর জেলা জজকোর্টের সরকারি কৌশলী (পিপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান ও তার ভাই মনির হোসেনকে আওয়ামী লীগের সভা চলাকালে নিজ বাসায় প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ওই ঘটনায় নিহত হাবিবুর রহমানের স্ত্রী জিন্নাত হাবিব বাদী হয়ে তৎকালীন শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রায়ত কে এম হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গকে প্রধান আসামি করে এবং আরো ৫৪ জনকে আসাসি করে পালং থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে ১নং আসামিসহ কয়েকজনের নাম বাদ দিয়ে ২০০৩ সালে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। তবে মামলার বাদী অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন দেন। নিম্ম আদালত নারজি তার আবেদন না-মঞ্জুর করে।
পরে উচ্চ আদালতে নারাজি মঞ্জুর করে। পুলিশ তদন্ত করে পুনরায় ৫৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর আসামিপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিভিশন করে মামলাটির কার্যক্রম বিলম্বিত করে। এরই মধ্যে আসামি কেএম হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ ও শাহজাহান মাঝি মৃত্যুবরণ করেন।
কিছুদিন আগে এ মামলার বাদী জিন্নাত হাবিবও মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘ ২০ বছর গত ১৭ সেপ্টেম্বর মামলার প্রত্যক্ষ সাক্ষী নিহত পিপি হাবিবুর রহমান ও বাদীনির বড় ছেলে প্রত্যক্ষ সাক্ষী অ্যাডভোকেট পারভেজ রহমান জন এর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্যদিয়ে কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়।
মামলায় ২৮জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তিতর্ক শেষ করে। ওইদিন ২৬ জন আসামিকে আদালত জেল হাজতে প্রেরণ করে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান এবং সরকার পক্ষে ছিলেন সরকারি কৌশলী (পিপি) অ্যাডভোকেট মীর্জা হজরত আলী ।
সরকারি কৌশলী অ্যাডভোকেট মীর্জা হজরত আলী রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, মামলায় বাদীপক্ষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমরা ন্যায় বিচার পেতে উচ্চ আদালতে আপীল করবো।
আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান বলেন, মামলায় আসামিরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো।