কোটার মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে অভিবাসীদের বন্টনের জন্য আবারো প্রাগে বৈঠকে বসছে সংস্থাটি। আরো ১ লাখ ৬০ হাজার অভিবাসন প্রত্যাশীকে আশ্রয় দেয়ার কথা ইউরোপীয় দেশগুলোর।
এরই মধ্যে অনেক দেশ অভিবাসী আগমনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর তথ্যমতে এখন পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ঢুকেছে প্রায় ৪ লাখ অভিবাসী। সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মারা গেছে ২ হাজার ৮শ ৫০ জন।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শরণার্থী এসেছে সিরিয়া থেকে। যা মোট শরনার্থীর ৫০ শতাংশ। আফগানিস্তান থেকে ১৩ শতাংশ, ইরিত্রিয়া থেকে ৮ শতাংশ, নাইজেরিয়া থেকে ৪ শতাংশ আর সোমালিয়া ও ইরাক থেকে ৩ শতাংশ।
৪ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ আর আইএস জঙ্গিগ্রুপের নতুন রাষ্ট্র ঘোষণা, বিমান হামলা এসব কারণে সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থীর সংখ্যাই বাড়ছে। সিরীয়দের আশ্রয় দিতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি। অভিবাসন প্রত্যাশীদের তালিকায় সিরীয়দের পরেই আফগানদের অবস্থান। ২০০১ সালের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি এখনো তালেবান আর আইএস জঙ্গিদের দখলে।
আফগান সরকারের মতে দেশটির ৮০ ভাগই বসবাসের জন্য অনিরাপদ। একই সমস্যা পাকিস্তানেরও। মার্কিন আগ্রাসনে বিধ্বস্ত দেশ ইরাক থেকেও মানুষ পালাচ্ছে জীবন বাঁচানোর তাগিদে। সংবিধান, বিচার বিভাগবিহীন দেশ আফ্রিকার ইরিত্রিয়া। যার পুরোটাই ধনিক শ্রেণীর নিয়ন্ত্রণে। গরীব-সহায় সম্বলহীন লোকেরা তাই দেশ ছেড়ে বাঁচার আসায় পালাচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।
নাইজেরিয়ার সমস্যা বোকো হারাম ও সোমালিয়ার আল শাবাব। এ দুই জঙ্গী গ্রুপের কারণেই মানুষ পালাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে ১ লাখ ৬০ হাজার শরনার্থীকে আশ্রয় দেয়ার প্রস্তাব করেছে, এদের মধ্যে বেশিরভাগই অবস্থান করছেন গ্রিস ও ইটালিতে। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী আগামী ২ বছরের মধ্যে নির্দিষ্ট হারে এই অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিতে হবে ইইউ’র সদস্য দেশগুলোতে।
একজন শরণার্থীর জন্য গ্রহণকারী দেশ পাবে ৬ হাজার ইউরো। শরণার্থী স্থানান্তরে পরিবহন ব্যয় হিসেবে ৫শ ইউরো পাবে গ্রিস, হাঙ্গেরি ও ইতালি। পুরো পরিকল্পনায় ইইউ’র ব্যয় ৭৮ কোটি ইউরো। ইউরোপের দেশগুলো ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলা, আয়ারল্যান্ড এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও শরনার্থী গ্রহণে ইচ্ছুক। এর পরেও থেকে যাবে বিপুল সংখ্যক অভিবাসন প্রত্যাশী।
তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিয়ে হিমশিম খাওয়া ইউরোপ, শরণার্থী প্রবেশ নিয়ে নিয়ম কানুন কঠোর করতে যাচ্ছে ইউরোপিয় ইউনিয়ন।
বৃহস্পতিবার ডেনমার্ক জার্মানির সাথে তাদের রেল ও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করার ঘোষণা দিয়েছে মেসিডোনিয়া। অভিবাসী ঠেকানোর মহড়া দিয়েছে হাঙ্গেরির সেনাবাহিনী।