করোনাভাইরাস পরিস্থিতি দেশে যে এখনও নিম্নমুখী হয়নি তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্রিফিংয়ে দেওয়া তথ্যে প্রতীয়মান। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর হার কিছুটা কমলেও নতুন ৭৯০ জনের দেহে করোনাভাইরাস এর উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। এসময়ে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩ জন। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই শর্তসাপেক্ষে মসজিদে নামাজ আদায় এবং শপিংমল সীমিত আকারে খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
দোকান ও শপিংমল খোলার শর্ত হিসেবে গত সোমবার মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের আদেশে বলা হয়েছিল: দোকান ও শপিংমল সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্তই খোলা রাখা যাবে৷ সেই সঙ্গে মেনে চলতে হবে সামাজিক দূরত্ব৷ পাশাপাশি সকল শপিং মলের সামনে রাখতে হবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। এছাড়া ওই আদেশে আসন্ন ঈদের ছুটিতে জনগণকে নিজ নিজ স্থানে থাকা এবং আন্তঃজেলা-উপজেলা বাড়িতে যাওয়ার ভ্রমণ থেকে নিবৃত্ত করার কথা বলা হয়।
এরপর বুধবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে মসজিদে নামাজ আদায়ের অনুমতি দেওয়ার কথা জানানো হয়। ওই প্রজ্ঞাপনেও মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের উল্লেখিত স্বাস্থ্যবিধিসহ মসজিদে সব ধরনের নিয়মকানুন মেনে চলার কথা বলা হয়েছে।
করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে তাতে মানুষ অনেকটা সচেতন। তবে কিছুক্ষেত্রে বিশেষ করে বাংলাদেশে কোনো কোনো জায়গায় এ বিষয়ে সচেতনতার বদলে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদাসীন মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এজন্য জনগণের ঘরে থাকা নিশ্চিতে সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এটা ঠিক যে, ভাইরাসের উৎপত্তির শহর উহানেও লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। বেশ কিছুদিন কোভিড ১৯ রোগী শনাক্ত না হওয়ায় সীমিত আকারে স্কুল খুলে দেওয়ার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে সেখানে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রেও লকডাউন শিথিল করার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে সেখানকার পরিস্থিতির চেয়ে আমাদের অবস্থা ভিন্ন। দেশে এখনও শত শত কোভিড ১৯ রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। এরপরও হয়তো আসন্ন ঈদসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকারকে এই কঠিন ঝুঁকির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে দোকান-শপিংমল ও মসজিদ সীমিত আকারে খোলার অনুমতি দেওয়া হলেও স্বাস্থ্যবিধি নিরাপত্তার বিষয়টি তাদের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষপাতী নই আমরা। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। এসব স্থানে সবাই যাতে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলেন তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ কাজটি সরকারের একার পক্ষে যে সম্ভব নয় তা সহজেই বোধগম্য। এজন্য সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজেদের ঝুঁকিমুক্ত করার দায়িত্ব সবার। আমরা মনে করি, জরুরি প্রয়োজন ব্যাতীত ঘরের বাইরে বের না হওয়াই শ্রেয়। এরপরও যদি জরুরি কাজে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে যথাযথ নিয়মকানুন মেনে নিজেকে এবং দেশকে করোনাভাইরাস এর ঝুঁকিমুক্ত রাখতে এগিয়ে আসতে আমরা সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।