নুরুল আলম আতিক। শুন্যের শুরুতে টিভি ফিকশনে এক জলজলে নাম। চতুর্থ মাত্রা, সাইকেলের ডানা, এ জার্নি বাই বোট, বিকল পাখির গান, কুসুমের চারপাশ, একটা ফোন করা যাবে প্লিজ-এর মতো টিভি ফিকশন নির্মাণ করে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বড় স্বপ্নের। সেই মত ২০১০ সালে নির্মাণ করেছিলেন নিজের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি ‘ডুবসাঁতার’। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত ছবিটির মুক্তির পর দীর্ঘদিন সিনেমা নির্মাণের বাইরে নুরুল আলম আতিক। টিভি ফিকশনেও খুব একটা দেখা যায়নি তাকে। হাতে গোনা কয়েকটি কাজ করেছেন, সেগুলোও কেমন ম্রিয়মান! তবে আশার কথা হচ্ছে, এখন তার হাতে তিন তিনটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা! পেয়ারার সুবাস, লাল মোরগের ঝুঁটি এবং মানুষের বাগান। সব ঠিক থাকলে চলতি বছরে মুক্তি পাবে জয়া আহসান অভিনীত তার পরিচালনায় ‘পেয়ারার সুবাস’ ছবিটি। ছবি ও নির্মাণ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়ে যোগাযোগ করা হয় এই নির্মাতার সাথে…
কেমন আছেন নুরুল আলম আতিক, কোথায় আছেন? জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেন, বেশ ভালো আছি। এই মুহূর্তে বাসায় আছি।
‘পেয়ারার সুবাস’, ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’-নামে দুটি ছবির কাজ শুরু করেছিলেন বছর কয়েক আগে। ছবিগুলোর কাজ কোন পর্যায়ে এখন?
ছবিগুলোর শুট অলমোস্ট ডান। বিশেষ করে ‘পেয়ারার সুবাস’-এর শুটিং সম্পন্ন হয়েছে আগেই। এডিটিংয়ের কাজও শেষ পর্যায়ে। ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ নিয়ে একটু জটিলতা আছে। এটার কিছুটা শুট আগে করেছিলাম। এখন ওই পর্যায়েই আছে।
‘পেয়ারার সুবাস’-এর মুক্তি নিয়ে পরিকল্পনা করছেন কোনো?
হ্যাঁ। প্রযোজক প্ল্যান করছেন। এদিকে আমিও ছবির কাজ শেষ করছি। পোস্ট প্রোডাকশনে অল্প কিছু কাজ বাকি।
এ বছরে ছবিটি মুক্তি পাবেতো?
আমার মনে হয়, এ বছরের মধ্যেই ছবিটি মুক্তি পাবে।
ছবিতে জয়া আহসান কেন্দ্রীয় চরিত্রে?
হ্যাঁ, জয়া আছে। এছাড়াও তারিক আনাম, আহমেদ রুবেল, সুষমা সরকারসহ আরো অনেকেই ছবিটিতে আছেন।
‘লাল মোরগের ঝুঁটি’র কী খবর?
ওই ছবিটাতো অল্প শুট করেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে এই ছবির কাজ শেষ করে ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’টাও শেষ করতে পারবো।
২০১০ সালে প্রথম সিনেমা ‘ডুবসাঁতার’ মুক্তি দিলেন। এখন ২০১৯! প্রায় দশ বছর…
হ্যাঁ, লম্বা সময়!
যদি জানতে চাই, এই লম্বা সময়ের বিরতিটা কেন?
বিভিন্ন সময় চেষ্টা করছি, হয় নাই। না হলে আর কী করবো! বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমার প্রজেক্ট পছন্দ হয়নি প্রডিউসারদের। চেষ্টাতো করেছিই। কাজতো করতেই চাই, এবং নিয়মিতই করতে চাই।
আপনি যে ধরনের সিনেমা করতে চান, প্রডিউসার তেমনটা পছন্দ করছেন না। এই যে পরিচালকের সাথে প্রডিউসারের ভাবনা-চিন্তার যে দূরত্ব, এটাকে কীভাবে দেখেন?
আমি সিনেমা করতে প্রযোজক পাচ্ছি না, এটাতো আসলে প্রডিউসারের দোষ না। এটা আমার দোষ। প্রডিউসারকে কনভিন্স করার যে বিষয় থাকে, সেটা আমি পারি না। অন্যরা পারে।
আর কী ধরনের বিষয় আশয় নিয়ে সিনেমা হবে, সেটাওতো আমার ইচ্ছেতে হয় না। প্রডিউসারের চাওয়ারও গল্প আছে। তাদের পছন্দ, অপছন্দেরও ব্যাপার থাকে। নিজে প্রডিউস করলেতো হতোই, সেটাতো আর সম্ভব না।
তার মানে ‘কম্প্রোমাইজং’ না করায় গত দশ বছর নুরুল আলম আতিক কোনো প্রযোজক পাননি?
এগুলো আরকি। বলার কিছু নেই! সিনেমা করার চেষ্টা করেছি, হয় নাই। সিনেমাও করি নাই। প্রশিক্ষণেই আছি আরকি! যাইহোক, নতুন একটা ছবির শুটিং করছি এখন। আর দুদিন শুট করলেই এটার কাজও শেষ হবে।
নতুন কোন ছবি ‘মানুষের বাগান’?
এটা এখনই বলছি না। ছবির নাম, কারা অভিনয় করছেন সবকিছু কয়েক দিনের মধ্যেই হয়তো জানতে পারবেন (যদিও ইতোমধ্যে খবর প্রকাশ হয়েছে বিভিন্ন মিডিয়ায়, তবু এই বিষয়ে এখনই স্পষ্ট করে কিছু বলতে নারাজ নির্মাতা)।
এখনতো প্রচুর ওয়েব কন্টেন্ট তৈরী হচ্ছে? আপনি কোনো ওয়েব কন্টেন্ট বানাচ্ছেন, বা এখন পর্যন্ত কোনো প্রস্তাব পেয়েছেন?
একেকটা সময় একেক রকম প্রজেকশনের জায়গা। এখন ওয়েবের সময়। ওয়েব কন্টেন্ট নির্ভর অডিও ভিজ্যুয়াল নানা এক্সপেরিমেন্টের মধ্যে দিয়ে যেতে থাকবে, এটা স্বাভাবিক ঘটনা। আমার সাথেও ওয়েবের কয়েকজনের সাথে কথা হয়েছে। আলাপ প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। দেখা যাক।
গত দশ বছরে বাংলাদেশের সিনেমা নিয়ে নিশ্চয় আপনার একটা অবজারভেশন তৈরী হয়েছে। কেমন দেখছেন বাংলা সিনেমার ভবিষ্যত?
সিনেমা হল পরিস্থিতি কিংবা সিনেমা তৈরী হওয়া সংক্রান্ত জটিলতার বাইরে যদি বলি, আমাদের সিনেমায় ইয়াং ও মেধাবী একটা শ্রেণি ঝুঁকতেছে, তারা সিনেমা করছে, সিনেমা নিয়ে চিন্তা করছে এগুলা স্পষ্ট হলো। বিদেশেও অনেকে দেশের সিনেমা নিয়ে একটা অবস্থান তৈরী করেছেন, করছেন এগুলোতো ভালো।
আপনি ভালো থাকুন আতিক ভাই…
ভালো থাকতে চাই। প্রতিক্ষণ কাজের মধ্যেই ডুবে থাকতে চাই। শখ করে কেউ দূরে থাকে না।