সবকিছুতেই আমাদের লোকদেখানো স্বভাবটা যেন কাটছেই না। নিজেকে জাহির করার নানা কৌশল আমরা জানি। কাউকে কিছু দান করছি- ক্যামেরা বা মিডিয়া কখন আসবে বা আসলো সেটার ওপর নির্ভর করে দান পর্বের সূচনা বা আনুষ্ঠানিকতা।
ঠিক তেমনি লক্ষ্য করা গেছে নামাজের ক্ষেত্রেও। করোনাকালে সরকার বলে দিয়েছে মসজিদে জামাতে নামাজ না পড়ে ঘরে বসেই নামাজ আদায় করার জন্য। মসজিদে সীমিত পরিসরে নামাজ আদায়ের কথাও বলে দিয়েছে সরকার। সেখানে একজন লোকদেখানো নামাজি বলবো, কারণ যিনি এই নির্দেশ না মেনে জুম্মা নামাজসহ অন্য ওয়াক্তের নামাজ আদায়ের জন্যে ঘর থেকে বের হবার জন্য ছটফট করেন তাকে লোকদেখানো নামাজিই বলা যায়।
কারণ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ তো ঘরে বসেই করা যায়। সেজন্য তো মসজিদই একমাত্র উপাসনালয় না। আমি আমার অন্তর থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে যেখানে বসেই নামাজ পড়ি না কেন সেটা আল্লাহ শুনবেন।
তার মানে এই না যে, সাধারণ সময়ে মসজিদে জামাতে নামাজ পড়ার বিরোধিতা করা হচ্ছে। যেহেতু বৈশ্বিক মহামারি করোনা আমাদের সাধারণ জীবনে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে সেই মুহূর্তে সামাজিক দূরত্ব মানার জন্য ঘরে বসেই নামাজ আদায়ের প্রসঙ্গটি এসেছে। অনেকে আবার এটার নানা ফতোয়া দিয়ে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে দেশে। সেই প্রসঙ্গে না যাই।
রাজধানীসহ সারা বাংলাদেশেই খোঁজ করলে দেখা যাবে দু’একটি জায়গা বাদে প্রত্যেকটি মসজিদে সরকারের সেই নির্দেশ অর্থাৎ সীমিত পরিসরে নামাজ আদায়ের নির্দেশ মানা হচ্ছে না। কে হবেন সেই সৌভাগ্যবান ৮ জন বা তিনজন, ইমাম আর মুয়াজ্জিনের পরে- এই নিয়ে প্রতিযোগিতা চলে। এটাও নির্ভর করে মসজিদ কমিটিতে যারা আছেন তাদের অগ্রাধিকারের বিষয়টি। আছে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের প্রভাব। সব মিলিয়ে যেন- ‘কোন বনেগা সৌভাগ্যবান নামাজি’- প্রতিযোগিতা।
গণমাধ্যমে পড়লাম গত ২৫ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত এক ব্যক্তি তারাবির নামাজে ইমামতি করায় মাগুরার শালিখা ও তার পার্শ্ববর্তী যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দুই গ্রাম লকডাউন করা হয়েছে। একই সঙ্গে লকডাউন করা হয়েছে একটি দেড় কিলোমিটার সড়ক।
জানা গেছে, তারাবির নামাজে ২৫ জন নামাজি ছিলেন। যারা নামাজ পড়তে এসেছিলেন তাদেরকে বিশেষ নজরে রাখা হবে। এই হচ্ছে একটি এলাকার খবর। এ রকম বহু এলাকা আছে- সমর্থিত এবং অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, মসজিদগুলোতে মানা হচ্ছে না সরকারি নির্দেশ। যেহেতু নামাজ আদায়ের বিষয়টি খুবই সংবেদনশীল, তাই গোপনে থেকে যাচ্ছে অনেক এলাকা। আক্রান্তের বিষয়টি পরবর্তী সময়ে আসছে অন্যভাবে।
একজন মুসলমান কেন বুঝতে পারবে না তার ধর্মের মূলবাণী। স্রষ্টার সন্তুষ্টি লাভ সব ধর্মের লোকই চান। সে জন্য তিনি আক্রান্ত হয়ে মসজিদে গিয়ে অন্য আটদশ জনকে আক্রান্ত করা কি ধর্মের কোথাও বলা আছে? আপনি আক্রান্ত নাও হতে পারেন, কিন্তু পাশে নামাজি ভদ্রলোক আছেন তিনি যে আক্রান্ত নন এটাতো নিশ্চিত নন আপনি। তা হলে কেন আপনি মসজিদে গিয়ে আক্রান্ত হয়ে বাসায় ফিরে আপনার পরিবারের সবাইকে আক্রান্ত করবেন?
করোনাকালের এই সময়টায় আমরা সামাজিক দূরত্ব মানার জন্য ঘরে বসেই আসুন ধর্ম পালন করি। আমরা লোকদেখানো নামাজি দেখতে চাই না। একজন প্রকৃত ধর্মপ্রাণ মানুষ নিজে আক্রান্ত হয়ে অন্যকে আক্রান্ত করতে পারেন না। কিংবা উপাসনালয়ে গিয়ে আক্রান্ত হয়ে নিজের পুরো পরিবারকে আক্রান্ত করতে পারেন না। কারণ তার পরিবারে ছোট শিশু থেকে বয়স্ক মানুষও আছেন, তাদের কথা ভেবেই না হয় এই ক্রান্তিকালে সাবধানে থেকে যার যার ধর্ম পালন করি।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)