রাজধানীর মুগদায় ছিনতাইয়ের সময় রিকশা থেকে ছিটক পড়ে তারিনা বেগম লিপার মারা যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে পরদিন দেখেন ছিনতাইকারীরা। এরপর থেকে তারা মিরপুরে গা ঢাকা দেয়।
গতকাল শনিবার রাতে এই সংঘবদ্ধ চক্রটি ছিনতাইয়ের উদ্দেশে বের হওয়ার প্রস্তুতির সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
রোববার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মহানগর পুলিশের (গোয়েন্দা) অতিরিক্ত কমিশনার মো. আব্দুল বাতেন।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি মুগদায় ছিনতাইয়ের সময় তারিনা বেগম লিপা হত্যার রহস্য উদঘাটন ও চারজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। বিষয়টি জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
গ্রেপ্তারা হলেন: মাে.মিজুয়ান মিয়া, শেখ লিটন, মো. আব্দুল মজিদ ও মাে. রফিক হাওলাদার। সেসময় তাদের কাছ থেকে এক রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি আগ্নেয়াস্ত্র, দুটি ছুরি ও ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত দুটি প্রাইভেট কার এবং ভিকটিমের একটি ট্যাব ও নগদ এক হাজর সাত’শ টাকা উদ্ধার করা হয়।
আব্দুল বাতেন বলেন: পুলিশের গোয়েন্দা পূর্ব বিভাগের একটি টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা মুগদায় ছিনতাইয়ের সময় তারিনা বেগম লিপা হত্যায় জড়িত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। শনিবার রাত সাড়ে বারোটায় রাজধানীর মুগদা এলাকা হতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন: গ্রেপ্তাররা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রাইভেট কার ব্যবহার করে রিক্সা যাত্রী ও পথচারীদের ব্যাগ ছিনতাই করে।
‘‘মাে. মিজুয়ান মিয়া জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ভাের বেলায় মুগদা এলাকার তারিনা বেগম লিপা ছিনতাইয়ের ঘটনায় তারা জড়িত ছিল। তারা খিলগাঁও ফ্লাইওভার থেকে কমলাপুর স্টেডিয়ামের মাঝামাঝি অবস্থান করছিল।
ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে লিপা রিক্সা যাওয়ার সময় তার হাতে থাকা ব্যাগটি দেখে তা নেয়ার জন্য টার্গেট করে এবং রিক্সাকে প্রাইভেটকারযােগে ধীর গতিতে অনুসরণ করতে থাকে। পরে দক্ষিণ মুগদার ইউনিক বাস কাউন্টার অতিক্রম করার পরে তারা লিপার হাতে থাকা ব্যাগ ধরে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে টান দেয়।
এ সময় ভিকটিম নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রিক্সা হতে পড়ে মাথায় মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
মিজুয়ান জানায়, এসময় তাদের বড়ভাই মনা গাড়ী চালাচ্ছিলেন। পরে তারা টয়েনবি রোড ফকিরাপুল, মতিঝিল, মিরপুর টেকনিক্যালে আরাে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায়। তারপর তারা বাসায় ফিরে যায়। গণমাধ্যমে প্রচারিত রিপার মৃত্যু সংবাদ শুনে তারা মিরপুরে বেশ কয়েকদিন গা ঢাকা দিয়ে ছিল।’’
বাতেন বলেন: এ ঘটনায় জড়িত মনা পলাতক আছে। তাকে গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় গ্রেপ্তার শেখ লিটনের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা রয়েছে। এছাড়াও পলাতক মনার বিরুদ্ধেও ৪টি মামলা আছে।
তিনি আরও বলেন: তারা আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালাে অস্ত্র ব্যবহার করে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায়, তাদের সুবিধামত স্থানে রাতে বা ভোররাতে রাস্তায় চলাচলকারী ব্যক্তিদেরকে গতিরােধ করে অস্ত্র ও ছুরির মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে মালামাল নিয়ে যায়। গতকাল রাতেও তারা ছিনতাইযের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন: ঢাকায় যারা প্রাইভেটকারে ছিনতাই করে তারা যদি ছিনতাইয়ের প্রস্তুতি না নেয় তাহলে শনাক্ত করা কঠিন। আর ছিনতাইকারীরাও টহল পুলিশ কিংবা পুলিশ পেট্রোল গাড়ির সামনে ছিনতাই করে না। তবে ছিনতাই এবং নগরবাসীর জানমাল রক্ষায় পুলিশ আরো বেশি প্রস্তুত থাকবে।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সিলেটের গোলাম কিবরিয়া ও তার স্ত্রী তারিনা বেগম লিপা দুই সন্তানসহ কমলাপুর রেলস্টেশনে যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীদের একটি চক্র লিপার ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তিনি রিকশা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।