লিঙ্গ পরিবর্তনের স্বাধীনতা ও তাদের মৌলিক নাগরিক অধিকারের জন্য বিশ্ব জুড়ে আন্দোলন করে আসছে তারা। বিশ্বে মাত্র ২০ টি দেশে আইনগতভাবে তাদের কিছু অধিকারের বৈধতা দিয়েছে বলে জানিয়েছে, তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘গ্লোবাল কমিশন অন এইচআইভি অ্যান্ড দি ল’।
লিঙ্গ পরিবর্তন অধিকার ও লিঙ্গ পরিচয়ের স্বীকৃতি প্রদানে শীর্ষে রয়েছে আর্জেন্টিনা এবং ডেনমার্ক। ২০১২ সালে আর্জেন্টিনার সিনেট সদস্যরা সার্জারির মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন অধিকারের আইন পাশে সর্বসম্মতিক্রমে সম্মত হন। এমনকি লিঙ্গ পরিবর্তনের পদ্ধতিটি সরকারি এবং বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্রের পরিকল্পনার অর্ন্তভুক্তি করা হয়।
তার দু’বছর পর ড্যানিশ পার্লামেন্ট ১৮ বছরের বেশি নাগরিকদের লিঙ্গ পরিবর্তনের স্বীকৃতি দেয়। কোন ধরনের মেডিকেল হস্তক্ষেপ ছাড়া তাদের আত্মনির্ধারণের মাধ্যমে তারা লিঙ্গ পরিবর্তনের অধিকার রাখে। ইউরোপের একমাত্র দেশ ডেনমার্ক লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য কোন ধরনের সাইকিয়াট্রিক ডায়াগোনিসেস অথবা মেডিকেল সার্টিফিকেট ছাড়াই লিঙ্গ পরিবর্তন করা সম্ভব বলে জানিয়েছে লিঙ্গ পরিবর্তনকারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ট্রান্সজেন্ডার ইউরোপ। তবে এই সংগঠনের দাবি ইউরোপের ৩৪ টি দেশ এখনো লিঙ্গ পরিবর্তনের করার মাধ্যমে তার নাম, লিঙ্গ পরিবর্তনকে স্বীকৃতি দেয়নি।
২০১৫ সালে মাল্টায় সরকার লিঙ্গ পরিচয়, জেন্ডার অনুভূতি, সেক্সের ধরন ইত্যাদি নির্ণয়ে আইন প্রণয়ন করেন। এই আইনুসারে স্বেচ্ছায় কাগজে কলমে ও শারীরিক হরমোনগত ভাবে লিঙ্গ পরিবর্তনে ব্যক্তি অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়।
১৯৮৭ সালে ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা্হ খোমেনি লিঙ্গ পুনস্থাপন সার্জারি বৈধতা দিয়ে এক ফতোয়া জারি করেন। যার ফলে ইরানে লিঙ্গ পরিবর্তনের অধিকার সরকারিভাবে স্বীকৃতি পায়। তবে সরকার বিরোধীরা সরকারের এই নীতিকে সমালোচনা করে ট্রান্সজেন্ডার মানুষের জন্য দ্বি-ধারালো তলোয়ার নীতি হিসাবে উল্লেখ্য করে।
২০১৪ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট লিঙ্গ পরিবর্তনকারীদের ‘হিজড়া’ নামে তৃতীয় লিঙ্গ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। তবে তাদের কোনো ধরনের লিঙ্গ পুনস্থাপনের দরকার হয়নি। এই অধিকার পাওয়ার পর লিঙ্গ পরিবর্তনকারীরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকুরীসহ লিঙ্গ বৈষম্য রক্ষায় তারা সমান অধিকার পায়।
তবে বিভিন্ন দেশে তারা আইনগত স্বীকৃতি পেলেও তাদের সামাজিক প্রতিহিংসা শিকার হতে হয়। ট্রান্সজেন্ডার ইউরোপের তথ্য অনুসারে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত মোট ২,২৬৪ জন লিঙ্গ পরিবর্তনকারীকে হত্যা করা হয়। ২০১৬ সালের ২৭ জন লিঙ্গ পরিবর্তনকারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।