চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

লাস ভেগাসে হামলার গা ছম ছম করা ছবিতে উঠে এলো যে গল্প 

আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের ভয়াবহতম হামলার ঘটনা ঘটে লাস ভেগাসে গত রোববার রাতে। রক্তাক্ত এই হামলার অনেক চিত্র ও ভিডিও উঠে এসেছে অনেকের ক্যামেরায়। কিন্তু এর ভয়াবহতার গভীরতা ছিল আরও অনেক বেশি। কোনকিছুতেই যা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। সেই ভয়াবহতার অনেক ছবি তুলেছেন গেটিং ইমেজ’র ফটোসাংবাদিক ডেভিড বেকার। টাইমস ম্যাগাজিনের কাছে তুলে ধরেছেন গা ছম ছম করা সেইসব ছবির গল্প তুলে ধরেছেন বেকার।

বেকার বলেন, লাস ভেগাসের সংগীত উৎসবের শেষ দুটি গানের ছবি তোলার অনুমতি ছিল সাংবাদিকদের। তাদের জন্য নির্ধারিত স্থান থেকে ছবি তুলছিলেন বেকার। পাঁচ থেকে দশ মিনিট পর গুলির শব্দ শুনে বাইরে যান তিনি। এটি আতশবাজির শব্দ বলে একজন পুলিশ সদস্য জানালে তিনি কাজে ফিরে যান। দ্বিতীয়বার একই শব্দ ভেসে এলে একজন জানায় এটি বাদ্যযন্ত্রের শব্দ। কিন্তু তৃতীয়বার শব্দের সময় তিনি সবাইকে দৌড়াতে দেখেন।

বেকার বলেন, অনেক মানুষ ভয়ে তাদের পাশ দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছিল। তিনি সেসময় ক্যামেরা নিয়ে একটি কি হতে যাচ্ছে তার ছবি নেয়ার জন্য একটি ভালো জায়গা বেছে নেন। তিনি বলেন, ‘আমি একটি টেবিলের ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে শুরুর করি। আমি নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকি কিছু হচ্ছে না, এটি স্পিকারে বাজানো গুলির শব্দ।’

তখন চারদিক অন্ধকার ছিল বলে জানান বেকার। বলেন, ‘লোকজন কান্নাকটি করে মোবাইলে কথা বলছিল এবং নিজেদের লুকানোর জন্য নিচু হয়ে পড়ছিল। গুলি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল। কিছুক্ষণের জন্য থেমে আবারও গুলি শুরু হয়। বাঁচার জন্য লোকজন আলো বন্ধ করে দিতে বলছিল। ভয়ে জড়োসড়ো লোকজন জীবন নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ আগেও আমি এ ধরণের কোন ছবি দেখিনি, আমি তখনো জানিনা আসলে কি ঘটছে।’

‘লোকজন একে অপরকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে, কেউ কেউ দৌড়াচ্ছে। যা ঘটছে আমি তাই তুলছি। এসময় কি ঘটছে তা বোঝা সত্যিই কষ্টকর ছিল।’

রাত ১০ টা ১২ মিনিট, গুলি শুরুর মিনিট খানেক পরই বেকার এক ব্যক্তির ছবি তোলেন যিনি এক নারীকে মাটিতে শুয়ে পড়ে রক্ষা করছিল। তিনি বলেন, ‘ওই নারীর কি গুলি লেগেছে নাকি মারা গেছেন তা বোঝা যাচ্ছিল না। এক মুহূর্ত পরই তারা দুজন উঠে দাঁড়ায় এবং দৌড়াতে থাকে। ওই নারীর আঘাত পেয়েছিল কিনা আমি জানিনা, তবে লোকটি তার ওপর শুয়ে পড়ে তাকে রক্ষা করছিল।’

রাত ১০ টা ১৬ মিনিটে চায়ের কাপ ও বিয়ার ক্যান বেষ্টিত মাটিতে পড়ে থাকা কয়েকটি মরদেহ পেরিয়ে এগিয়ে যান বেকার। এদের মধ্যে একজন নারীর রক্তাক্ত দেহও পড়ে ছিল। তিনি জানেন না ওই নারী মৃত না জীবিত। তিনি ছবি তুলে যাচ্ছিলেন।‘আমি যখন বুঝতে পারলাম মানুষগুলো মারা যাচ্ছে, তখন তা আমাকে প্রভাবিত করতে থাকে, আমি ব্যাথিত হই’ বলে তিনি যোগ করেন।

এরপর বেকার মিডিয়া সেন্টারে ফিরে যান এবং সহকর্মীর কাছে জানতে চান কি হয়েছে? তিনি শুধু ‘কোড রেড’ আবেং ‘পেরিমিটার’ শব্দ দুটি শুনতে পান। তিনি বলেন, ‘আমি আমার তোলা ছবি দেখতে থাকি এবং নিজের চোখে যা দেখেছি তা ছিল অবিশ্বাস্য। আমি যা তুলেছি এবং যা ঘটেছে অন্ধকার থাকায় আমি তার সবকিছু তুলতে পারিনি।’ ছবির দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ রক্তে মিশে ছিল, আমি শুধু ভেবেছি হে ঈশ্বর এটা কি সত্যি?’

কিছুক্ষণ পরই অন্যান্যদের সঙ্গে চলে যান ডেভিড বেকার, গাড়িতে গিয়ে বসেন। কয়েক ঘণ্টা পরই  আধুনিক আমেরিকার সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার ক্ষত কাটিয়ে জেগে ওঠে দেশবাসী।