নেপালে ইউএস বাংলা উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহতদের ডিএনএ টেস্ট করে লাশ শনাক্ত করতে ১০ দিন লাগবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল টিমের সদস্য ও ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার কাঠমান্ডুতে পৌঁছানোর পর তিনি এ কথা জানান। এই দুর্ঘটনায় নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে ‘৮ জন ছাড়া কাউকেই শণাক্ত করার উপায় নেই’ বলে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল।
বৃহস্পতিবার নেপালে প্রেসব্রিফিংয়ের সময় সোহেল মাহমুদ আরও জানান, নিহতদের ডিএনএ সংগ্রহের পর দু’টি করে স্যাম্পল নিয়ে স্বজনদের স্যাম্পলের সঙ্গে মিলিয়ে শনাক্ত করা হবে। প্রত্যেকের দু’টি করে স্যাম্পল নিয়ে একটি নেপালে দিয়ে আরেকটি নিয়ে দেশে ফিরবে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বিশেষজ্ঞ দল।
সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের স্বার্থে শনাক্তকরণের কাজ করবো। দু’টি স্যাম্পল কালেক্ট করবো। আমরা আমাদের মতো, তারা তাদের মতো করবে।’
মরদেহের ডিএনএ স্যাম্পল হিসেবে দাঁত, চুল এবং হাড় সংগ্রহ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে ১০ দিন লাগবে।
১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস বাংলার একটি বিমান ৬৭ যাত্রী ও চার ক্রু নিয়ে বিধ্বস্ত হয়। এতে ৫১ জন নিহত হন। দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি। যাত্রী ছাড়াও ৪ জন ক্রু ছিলেন ফ্লাইটটিতে।
বিমানমন্ত্রী বুধবার টিচিং মেডিকেলের মর্গ দেখে এসে জানান, (নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে) ৮ জন ছাড়া কাউকেই শনাক্ত করার উপায় নেই।
দুর্ঘটনায় যেসব মরদেহ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শনাক্ত করা যাবে না, তাদের প্রত্যেকের ডিএনএ পরীক্ষার পর স্বজনদের কাছে তা হস্তান্তর করা হবে। মরদেহ শনাক্ত করা নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় দুই দেশ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্ত করতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ল্যাবে ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিয়িক এসিড) পরীক্ষা করা হবে। নমুনা সংগ্রহ করতে এরই মধ্যে সিআইডি’র দুই বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা নেপাল গেছেন। এছাড়া নিহতদের স্বজনদেরও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ থেকে ৯ সদস্যের মেডিক্যাল টিমের মধ্যে ৬ জন নেপালে যান। পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতায় বাকি তিন জন যেতে পারেননি। তারা পরে যাবেন।
এখন পর্যন্ত আটজনের মৃতদেহ শনাক্ত করা গেছে। তবে ঘটনার চার দিন পরও কোনো মরদেহ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, পরিচয় নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকলে মরদেহ হস্তান্তরে ডিএনএ টেস্ট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এজন্য নেপালে পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রত্যেকের পরিচয় নিশ্চিত হয়েই লাশ হস্তান্তর করা হবে।
ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালের ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট প্রধান ড. প্রমোদ শ্রেষ্ঠ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পরিচয় সুনিশ্চিত হয়েই তারা মরদেহ হস্তান্তর করতে চান। ইতিমধ্যে ৩০টি মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। এদের মধ্যে ৮ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকিদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তিনি জানিয়েছেন, ময়নাতদন্ত, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও পরিচয় জানতে চারটি বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে। এর মধ্যে দু’টি দল ময়নাতদন্ত করছে। একটি দল মরদেহের নানা নমুনা নিয়ে সেখান থেকে পরিচয় জানার চেষ্টা করছে। আর অন্যটি পরিবারের স্বজনদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে।
এই চারটি দল সম্মিলিতভাবে একটি মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত করার কাজটি করবে। এজন্যই নিহতদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
নেপালের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত ১০ জন বাংলাদেশির মধ্যে সাতজনকে হাসপাতাল ছাড়ার অনুমতি দিয়েছে।
কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজে ভর্তি আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকা দুই বাংলাদেশিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য কোনো দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে শাহরীন আহমেদকে ঢাকায় ও ইয়াকুব আলীকে নয়াদিল্লিতে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে কাঠমান্ডুর ওম হসপিটাল এন্ড রিসার্চ সেন্টারের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ডা. রেজওয়ানুল হক শাওনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বুধবার রাতে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়।
সোমবার ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বোমবার্ডিয়ার ড্যাশ ৮ কিউ৪০০ উড়োজাহাজটি ঢাকা থেকে ছেড়ে গিয়ে দুপুর ২টা ২০ মিনিটে নেপালে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণ করার সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়।
এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৫১। এর মধ্যে ২৮ জন বাংলাদেশি, ২২ জন নেপালি এবং ১ জন চীনা নাগরিক। চিকিৎসাধীন যাত্রীদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
উড়োজাহাজটিতে থাকা ৬৭ যাত্রীর মধ্যে ৩২ জন বাংলাদেশী, ৩৩ জন নেপালি, একজন মালদ্বীপের এবং একজন চীনের নাগরিক। উড়োজাহাজটিতে ৬৭ যাত্রীর পাশাপাশি ৪ জন ক্রু ছিলেন বলে ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।