চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

লাল পাহাড় ডিঙিয়ে অন্য সম্মানের খোঁজে মেসি

কয়েকদিন ধরে আলোচনা, এই এপ্রিলই কি লিওনেল মেসির বার্সেলোনা ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি বিশ্রামের মাস? সদ্য বিভিন্ন ম্যাচে বিশ্রাম পাওয়ার পর এ রকম তথ্যই উঁকি দিচ্ছে। মেসিকে যেন ঝড়ঝাপটা থেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন কোচ আর্নেস্টো ভালভার্দে।

লক্ষ্য? খুব সহজ। এ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বার্সেলোনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিনতম ম্যাচে দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পা দুটোকে তরতাজা রাখা। সেই কৌশলে অনেকটাই সফল ভালভার্দে। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মেসি গোল করে দলকে জিতিয়েছেন। লা লিগা চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন, কোপা ডেল রের ফাইনাল ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালেও তুলেছেন। আবার বদলি হিসেবে নেমেছেন আলাভেজ, লেভান্তের বিরুদ্ধে। হুয়েস্কা ম্যাচেও ছিলেন না। এ বছর এলএম টেনের আসল পরীক্ষা এবারই। সামনে লিভারপুল। যাদের অল রেড নয়, গত দুই মৌসুমের বিচারে যাদের লাল পাহাড়ও বলা হয়। যাকে টপকানো কঠিন।

আরও ভালো করে বললে ভার্জিল ফন ডাইক। গত মৌসুমের মার্চ থেকে এখনও পর্যন্ত টানা ৪৫টা ম্যাচে প্রিমিয়ার লিগে এই ডাচ ডিফেন্ডারকে ড্রিবল করে টপকাতে পারেননি কেউ। ‘প্রিমিয়ার লিগের কেউ’ মানে সেই তালিকায় আছেন এডেন হ্যাজার্ড, পল পগবা, সার্জিও আগুয়েরো, বেনার্দো সিলভারা।

কিন্তু তার নাম যে লিও মেসি! চার বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে বার্সেলোনা। এবার তিনিই অধিনায়ক। সামনে পঞ্চমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার হাতছানি। যে সংখ্যায় ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছেন ফুটবল ক্যারিয়ারে তার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।

প্রিমিয়ার লিগে এবারের বর্ষসেরা ফন ডাইক জানেন, মৌসুমে তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বুধবার রাতেই। গতবার ফাইনালে রোনালদো এবং তার রিয়াল মাদ্রিদকে থামাতে পারেননি ডাচ ডিফেন্ডার। যতই প্রিমিয়ার লিগে বর্ষসেরা হন, ফন ডাইক ভালোভাবেই জানেন, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ঠিক কী জিনিস। ইউরোপের সবচেয়ে বড় মঞ্চে, ক্যাম্প ন্যুতে মেসিকে রুখে দেয়া মানে লিভারপুল শহরে জনপ্রিয়তায় ‘বিটলস’র কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া।

ডাচ ডিফেন্ডারের ভাষায়, ‘মেসি বিশ্বের সেরা ফুটবলার। কিন্তু আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন আমরা কীভাবে ডিফেন্ড করি। একের বিরুদ্ধে এক নয়, আমরা সবাই মিলে ডিফেন্ড করি। অ্যাটাকও করি একসঙ্গে। আমরা তৈরি থাকব।’

প্রচ্ছন্ন হুমকি যেন! আসলে ফন ডাইকের যে অন্য একটি হিসেবও চোকানোর আছে। ছয় বছর আগে গ্রুপ পর্যায়ে ন্যু ক্যাম্পের বিশাল এই স্টেডিয়ামে খেলতে এসেছিলেন কমবয়সী ফন ডাইক। জার্সিটা ছিল সেল্টিকের। সেই ম্যাচে মেসি ছিলেন না। কিন্তু নেইমার হ্যাটট্রিক করে তছনছ করে দিয়েছিলেন সেল্টিক ডিফেন্স। তার পাশ দিয়ে ছয় ছয়টা গোল হতে দেখাই বদলে দিয়েছিল ফন ডাইককে।

তার কথায়, ‘সেই রাতে আমি অনেকটা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলাম। ঐতিহাসিক স্টেডিয়ামে সেটা ছিল আমার প্রথম ম্যাচ। এবার দ্বিতীয়বার যাব। আমি আরও একবার বার্সার বিরুদ্ধে খেলার জন্য মুখিয়ে আছি।’

এ বছরের ফর্মের তুলনা করলে মেসি বনাম ফন ডাইক আসলে কাছাকাছি। যখনই গোলের দরকার পড়েছে, মেসির পা ঝলসে উঠেছে। তাই ভিএফডি বনাম এলএম টেন হতে চলেছে বুধবারের ম্যাচের আসল আকর্ষণ।

এই যুদ্ধে অবশ্য আরও অনেক চরিত্র আছে। লিভারপুলের দুই সাবেক লুইস সুয়ারেজ ও ফিলিপে কৌতিনহো। দ্বিতীয়জন বার্সা টিমমেটদের সতর্ক করে বলেছেন, ‘লিভারপুল যথেষ্ট শক্তিশালী। তারা মানসিকভাবেও শক্তিশালী। আর লিভারপুল মানে কিন্তু সালাহ, মানে আর ফিরিমিরোন নয়। এছাড়াও তাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার আছে।’

সুয়ারেজের সতর্কবাণী, ‘আমাদের একটা মিনিটের জন্যও অন্যমনস্ক হলে চলবে না। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ম্যাচে মিনিট দশেকের জন্য এ রকম হয়েছিল। তাতেই বিপদ হতে পারত।’

লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপও প্রহর গুনছেন, ‘আমি লিভারপুল, ডর্টমুন্ডের কোচ হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে অনেকবার খেলেছি। কিন্তু একবারও বার্সেলোনার বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলা হয়নি। অন্য দলগুলোকে তাদের বিরুদ্ধে চাপে পড়তে দেখেছি। দেখতে চাই, আমরা কী করতে পারি।’

এ তো গেল লিভারপুলের কথা, কিন্তু অল রেডদের আটকাতে বার্সেলোনার কৌশল কী? ভালভার্দে বলেছেন, ‘দরকার পড়লে আমরা লং বল কৌশলেও যেতে পারি।’

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের আগের দিনই আবার অনন্য সম্মান পেয়েছেন মেসি। কাতালুনিয়ার সরকার থেকে তাকে দেয়া হয়েছে ‘ক্রিউ ডে সান জর্দি’। যা কাতালুনিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মান। এই প্রদেশে বিশেষ কৃতিত্বের জন্য দেয়া হয়। মেসি মাত্র দ্বিতীয় ফুটবলার যিনি এই সম্মানে ভূষিত হলেন। এর আগে বার্সেলোনার আরেক কিংবদন্তি জাভি হার্নান্দেজকে দেয়া হয়েছিল এই সম্মান।

তবে মেসি হয়তো এই মুহূর্তে ফুটবল মাঠে অন্য সম্মানের খোঁজে। লিভারপুলের বাধা টপকালেই আরও একবার ফাইনালে উঠবে বার্সেলোনা। মেসির সামনে থাকবে পঞ্চমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের হাতছানি।