এইতো মাত্র ১০ দিন আগেও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন রুহিন আফরিন জয়ী। একটি লাল জামদানির ভীষণ শখ ছিল তার। সদা হাস্যোজ্জ্বল প্রাণবন্ত মেয়েটির ইচ্ছা ছিল একাই ঘুরবেন থাইল্যান্ডে। ইচ্ছা ছিল গলায় পরবেন হালকা গোলাপি নেকলেস।
শুধু তাই নয়, পরিবারের মধ্যমনি মা-বাবা ভক্ত মেয়েটির চাকরির প্রথম মাসের বেতনের টাকা দিয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খেতে চেয়েছিলেন রেস্টুরেন্টে। ওভারটাইমের টাকা দিয়ে মাকে কিনে দিয়েছিলেন শাড়ী। ইচ্ছা ছিল আরও ভালো শাড়ী কিনে দেয়ার।
শেষ পর্যন্ত কিছুই করা হলো না। তার সব ইচ্ছাই থেকে গেলো অপূর্ণ। সব ইচ্ছের ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন তিনি।
শনিবার রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে বিকালে আইসিইউতে ভর্তি করা হয় জয়ীকে। কিন্তু ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে মৃত্যর কোলে ঢলে পড়েন লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত জয়ী।
গত পরশু বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কাকে বধের উচ্ছাসে ফেটে পড়ে অন্যদের মত ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তিনিও। তার কয়েকঘণ্টা পরই নিথর হয়ে গেলো সবকিছুই।
মেয়েটির এই আকস্মিক চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না কেউই। মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে তার স্বজনদেরও। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে বিবিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে মাস্টার্স করা মেয়েটির স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়ার।
কিন্তু সেই স্বপ্ন ডানা মেলার আগেই মৃত্যুর কাছে পরাজিত হতে হলো তাকে। মৃত্যুর আগে বাঁচার জন্য তীব্র লড়াই করেছিলেন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত মেয়েটি। নিজেই নিজের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতেন প্রচণ্ড রকমের আত্মবিশ্বাসী জয়ী।
জানা গেছে, লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত জয়ীকে ২০১৭ সালের আগস্টেই কলকাতার চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন ক্যান্সারকে সঙ্গী করেই বেঁচে থাকতে হবে তাকে।
সে সময় চিকিৎসকদের কাছে প্রশ্ন করেছিলেন তিনি, আমি আর কতদিন বাঁচবো? তার এ প্রশ্নের সোজাসুজি কোনো উত্তর না দিয়ে মৃদু হেসে ছিলেন চিকিৎসক।
না অার কোনদিন প্রশ্ন করবে না তিনি। প্রাণবন্ত মেয়েটির আর পরা হবে না লাল জামদানি। মায়ের বুক খালি করে চলে যাওয়া মেয়েটিকে ভেবে ভেবে নীরবেই চোখের জল ঝরবে দু:খিনী মায়ের।