টুইটারে অবস্থান শক্ত করতে টাকা দিয়ে ভুয়া ফলোয়ার কিনছেন তারকা এবং খ্যাতনামা ব্যক্তিরা। ভুয়া ফলোয়ার কেনার তালিকায় যেমন আছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী, তেমনি আছেন শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদও। তালিকা থেকে বাদ যায়নি উঠতি তারকারাও।
এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।
শনিবার প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অর্থ ব্যয় করে তারকাদের ভুয়া অনুসারী কেনার বিষয়ে অনেক তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফলোয়ার বাড়াতে বিপুল পরিমাণ ভুয়া টুইটার অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে থাকে ডেভুমি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এসব অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে তারকাদের টুইটার অ্যাকাউন্টের ফলোয়ার বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের টুইটের রিটুইট করা কিংবা লাইক দেওয়া হয়ে থাকে। মূলত টুইটারে নিজেদের খুব জনপ্রিয় হিসেবে জাহির করার জন্যই তারকাদের এমন কর্মকাণ্ড।
ডেভুমি নামের এই মার্কেটপ্লেসটির ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, টুইটারে ফলোয়ার, রিটুইট বাড়ানোর পাশাপাশি ইউটিউবে সাবস্ক্রাইবার, ভিডিও ভিউ, শেয়ার প্রভৃতি বাড়ানোর সেবাও দিয়ে থাকে মার্কেটপ্লেসটি।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্যমতে ভুয়া ফলোয়ারের ব্যবসা করে ইতোমধ্যেই কয়েক মিলিয়ন ডলার পকেটে পুরেছে ডেভুমি।
মার্কেটপ্লেসটি এখন পর্যন্ত গ্রাহকদের প্রায় ২০ কোটির বেশি টুইটার ফলোয়ারের যোগান দিয়েছে, এমন তথ্যও উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমটির এ অনুসন্ধানে। তবে আশংকার বিষয় হলো ফলোয়ার বাড়াতে যেসব ভুয়া টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর অধিকাংশই সাধারণ ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন তথ্য চুরি করে তৈরি করা। অর্থাৎ এসব ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরিতে ব্যবহার করা হয় অন্য কোনো ব্যবহারকারীর নাম, ব্যক্তিগত তথ্য এবং ছবি। এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য চুরির অভিযোগও উঠেছে ডেভুমির বিরুদ্ধে।
শুধু ডেভুমি নয়, একই ধরনের আরও কয়েক ডজন মার্কেটপ্লেস আছে যেখান থেকে ভুয়া লাইক, শেয়ার, ফলোয়ার, সাবস্ক্রাইবার পাওয়া যায়।
তবে পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ডেভুমির প্রতিষ্ঠাতা। অন্যদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলেও দাবি করেছেন সংবাদমাধ্যমটির কাছে। তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ করা হচ্ছে, দাবি তার।
কারা কিনছেন ভুয়া ফলোয়ার
ডেভুমির ভুয়া ফলোয়ার পাওয়া গেছে কম্পিউটার কোম্পানি ডেলের প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ডেলের অ্যাকাউন্টে। তালিকায় আছেন অভিনেতা জন লেগুইজেমো, ফুটবল ধারাভাষ্যকার রে লেভিসসহ আরও ডজনখানেক তারকা।
মজার ব্যাপার হলো টুইটারের বোর্ড মেম্বার মার্থা লেন ফক্সও আছেন এ তালিকায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু রাজনীতিবিদের পাশাপাশি অন্যান্য কয়েকটি দেশের রাজনীতিবিদরাও ফলোয়ার কিনেছেন ডেভুমির কাছ থেকে। চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম জিনহুয়ার একজন সম্পাদকও মার্কেটপ্লেসটিকে অর্থ দিয়ে ফলোয়ার বাড়িয়েছেন। ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টাও বিপুল সংখ্যক ফলোয়ার সংগ্রহ করেছেন এখান থেকে।
অলিম্পিকে গোল্ড মেডেল জয়ী ব্রিটিশ অ্যাথলেট জেমস ক্র্যাকনেল ৫০ হাজার ফলোয়ার কিনেছেন এখান থেকে। একজন মিস আয়ারল্যান্ড তারকার জন্যও এখান থেকে দুই হাজার ডলার খরচ করে তিন লাখ ফলোয়ার কেনা হয়েছে। তবে তার ব্র্যান্ডিং এজেন্সির একজন কর্মীকে ভুয়া ফলোয়ার কেনার দায়ে চাকরীচ্যুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র।
কেন ভুয়া ফলোয়ার কিনছেন তারকারা
মূলত টুইটারে শক্ত অবস্থান তৈরি ও জনপ্রিয় হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতেই ভুয়া ফলোয়ার কিনছেন তারকা, রাজনীতিবিদ এবং অন্যরা। তবে এর বাইরে রয়েছে আরও একটি কারণ। বিভিন্ন বড় কোম্পানি তাদের পণ্য ও সেবার প্রচারণার জন্য তারকাদের বেছে নেয়। টুইটারে তাদের মাধ্যমে পণ্যের প্রচারণা চালানো হয়। টুইটের মাধ্যমে পণ্যের প্রচারণা চালিয়ে বিপুল অর্থ আয় করেন তারকারাও।
কিন্তু একজন তারকা পেইড টুইটের জন্য কত পাবেন, তা নির্ভর করে তার ফলোয়ার সংখ্যার উপর। যার ফলোয়ার যত বেশি, তাঁকে তত বেশি অর্থ দেয় কোম্পানিগুলো।
তবে গ্রাহকদের জন্যও ভুয়া ফলোয়ার কিনছে অনেক ব্র্যান্ড ও মার্কেটিং এজেন্সি। গ্রাহকদের নির্ধারিত লক্ষ্য সহজে পূরণ করার জন্য কিছু টাকা ঢেলে অল্প সময়েই পাওয়া যাচ্ছে অনেক ফলোয়ার। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদেরও বাধ্য করছে টাকা দিয়ে ফলোয়ার কেনার জন্য।
যা বলছে টুইটার
নিউ ইয়র্ক টাইমসের এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর টুইটার জানিয়েছে, ডেভুমি এবং এ ধরনের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো যে কৌশল অবলম্বন করছে তা টুইটারের নীতিমালা পরিপন্থী এবং কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ইতোমধ্যেই টুইটার এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে বলেও জানানো হয় এ টুইটারের এ টুইটে।
এরই মধ্যে টুইটার এ ধরনের ভুয়া অ্যাকাউন্ট অপসারণ করতে শুরু করেছে। অপসারণ করা হয়েছে ডেভুমির টুইটার অ্যাকাউন্টও।