প্রতি বছরের মতো এবারও জাতীয় সংসদে বাজেট ঘোষণার পরদিন বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) বাজেট পর্যালোচনা শেষে এ বিষয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। বাজেটে প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির প্রাক্কলনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তারা নিজেদের মতামত তুলে ধরেছে। তারা কথা বলেছে সাধারণ মানুষের ওপর ট্যাক্স বৃদ্ধির বিষয়েও। যেসব খাত থেকে সহজে ট্যাক্স আদায় করা যায় প্রস্তাবিত বাজেটে সেসব খাত থেকে রাজস্ব আহরণের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তার অভিযোগ, যারা দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের দিকে নজর না দিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর ট্যাক্স চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়টিকে নৈতিকতা বিরোধী বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। সিপিডির এই বক্তব্যের সঙ্গে আমরা একমত পোষণ করছি। তবে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এক লাখ টাকার ওপরে যাদের আছে তারা যথেষ্ট সম্পদশালী, তাই আবগারি শুল্ক দিতে তাদের কোন সমস্যা হবে না। আমরা বলতে চাই, যাদের পুঁজি মাত্র ১ লাখ টাকা, আর সেই টাকা ব্যাংকে রাখার ফলে তা থেকে আবগারি শুল্ক কেটে নেয়াটা কখনোই মানবিক নয়। সাধারণ মানুষের জমানো টাকা থেকে শুল্ক নেয়ার বদলে যারা পেশি শক্তি ও অনৈতিকতার মাধ্যমে রাষ্ট্রের শত কোটি কোটি টাকার কর ফাঁকি দেন তাদের থেকে কর আদায় করার প্রচেষ্টা বাড়ানোর জন্য আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাই। প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু জায়গায় বিভ্রান্তি রয়েছে বলেও সিপিডি দাবি করেছে। এই বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নেবে বলে আমরা মনে করি। ঘাটতি বাজেটের বিষয়েও তারা কথা বলেছে। পরিসংখ্যান বলছে, ঘাটতি বাজেট মেটাতে এবার যে পরিমাণ বৈদেশিক সাহায্যের কথা বলা হয়েছে, এতটা বৈদেশিক সাহায্য কখনো বাংলাদেশ ব্যবহার করেনি। তাই এবারের প্রস্তাবিত বাজেট যাতে একটি পরাবাস্তব বাজেট না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে শুধু সমালোচনা কিংবা হতাশার বদলে এবারের বাজেটের বিভিন্ন দিকের প্রশংসাও করা হয়েছে। আমরা আশা করি, মূল বাজেটে বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ও কর্মপরিকল্পনা যোগ করার মাধ্যমে সামগ্রিক কর কাঠামো সহনীয় পর্যায়ে রেখে উৎপাদন ও ভোগ ব্যয় কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার দিকে সরকার আরো বেশি মনোযোগ দেবে। ব্যক্তিখাতে ঋণপ্রবাহ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি ও মুদ্রা ব্যস্থাপনায় স্থিতিশীলতাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম সহনীয় রাখা ও বেকারত্বের হার কমানোর মাধ্যমে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তকে ক্ষতিগস্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে উন্নয়নের এ বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে আসলেই যুক্ত হবে বলে আমরা আশা করি।