ক্রেতাদের মধ্যে লবণের দাম নিয়ে যাতে আতঙ্ক না ছড়ায় সেজন্য মঙ্গলবারে কারওয়ান বাজারে কিচেন মার্কেটের গলির মুদি দোকানগুলো পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার ব্যবসায়ীরা।
তবে পুলিশ বলছে, আজ মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারে মার্কেট সাপ্তাহিক বন্ধ। তাই দোকানগুলো বন্ধ রয়েছে। কিন্তু পুলিশ বন্ধের নির্দেশ দেয়নি।
এদিন সন্ধ্যায় সরেজমিনে কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের পেছনের গলিতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে টহলরত অবস্থায় দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে বাজারে লবণের জন্য ক্রেতার চাপ বেড়ে গেছে। এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে অধিকাংশ দোকানে লবণ বিক্রি শেষ হয়ে গেছে।
কারওয়ান বাজারের ইউসুফ জেনারেল স্টোরের বিক্রেতারা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, দুপুরে হঠাৎ করে লবণ কেনার জন্য মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। চাল-ডাল কিছু না কিনে শুধু লবণ কিনছে । বলতে গেলে সিরিয়াল লেগে গেছে।
তারা বলেন, প্রায় সব দোকানে ৩০ থেকে ৪০ বস্তা করে লবণ বিক্রি হয়েছে। প্রতি বস্তায় ২৫ কেজি লবণ থাকে।
এই বাজারে ৭ থেকে ৮ টি মুদি দোকানে কথা বলে জানা গেছে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের লবণ বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। কেউ কেউ ৬ থেকে ৭ কেজি করে লবণ কিনেছে। তবে যেহেতু লবণের প্যাকেটে মূল্য লেখা রয়েছে, তাই দাম বেশি নেয়ার সুযোগ নাই। নির্ধারিত দামেই বিক্রি হয়েছে বলে তাদের দাবি।
তবে কয়েকজন ক্রেতারা বলেছেন, অনেক দোকানেই লবণ রয়েছে। কিন্তু গুজব হলেও দাম হয়তো বাড়বে এমন প্রত্যাশায় তারা লবণ বিক্রি করছেন না।
দাম বাড়বে শুনে রাজধানীর নাখাল পাড়া থেকে কারওয়ান বাজারে লবণ কিনতে আসা গৃহিনী সালেহা বেগম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, দাম নাকি বাড়ছে। তাই কিনতে এলাম। এসে দেখি অনেক পুলিশ। দোকানগুলোও বন্ধ।
আরেকজন ক্রেতা সোহেল খান বলেন, দুপুরের পরে এসেছি আমি। দোকানগুলোতে লবণ আছে। কিন্তু তারা বিক্রি করছে না। এমনকি কেউ কেউ দোকান থেকে লবণ সরে ফেলতেও দেখেছি।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পুলিশ সদস্য চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এখানে (কারওয়ান বাজার) অনেক লোক জমা হয়ে গেছে লবণ কেনার জন্য। এই সুযোগে হয়তো ব্যবসায়ীরা দাম বেশি রাখতে পারে কিংবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। সেজন্য আমাদের এখানে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে দোকান বন্ধের বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না।
জানা যায়, বেশি দামে লবণ বিক্রির অভিযোগে ধানমন্ডি ও হাজারীবাগ এলাকা থেকে ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
ধানমন্ডি থানা পুলিশ জানায়, ঊর্ধ্বতনের নির্দেশ পেয়ে ধানমন্ডি ও হাজারীবাগ এলাকার সুপারশপ এবং দোকানগুলোতে লবণের খোঁজে পুলিশ যায়। গিয়ে দেখে অনেক দোকানে লবণ শেষ। কী কারণে তাদের লবণ নেই, চালানের সঙ্গে মজুদের পরিমাণ দেখা হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ দোকানে গিয়ে লবণ পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামীম অর রশিদ তালুকদার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, লবণ নিয়ে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা কারওয়ান বাজারে বিকালে প্রচারণা চালিয়েছি। এছাড়াও কেউ অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রি করছে কি না- সে বিষয়ে নজর রাখছি। আমরা মানুষদের আশ্বস্ত করেছি যে এমন গুজবে যেন কেউ বিভ্রান্ত না হন।
লবণ নিয়ে গুজব ছড়ানোর পর মানুষ হুমড়ি খেয়ে লবণ কিনেছে। কেউ কেউ অতিরিক্ত দামেও কিনেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে অধিক মুনাফা লাভের আশায় একটি স্বার্থান্বেষী মহল দেশে লবণের দাম অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিষয়টিকে গুজব উল্লেখ করে এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। দেশে পর্যাপ্ত লবণের মজুদ রয়েছে বলেও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।