চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে অনেক বেশি। গত ১০ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে ১৭ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৪৩ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। অথচ এবারের বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করেছিল। পরে তা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয় সংশোধিত লক্ষমাত্রা।
তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ হাজার ২৮৭ কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে এই দশ মাসে। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নির্ধারিত লক্ষমাত্রার ১৬৬ শতাংশ।
প্রস্তাবিত আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ হাজার কোটি টাকা।
সরকার বাজেটের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে টাকা নেওয়ার কথা বললেও অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রধান সোর্স হয়ে পড়েছে এখন সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সংগৃহীত অর্থ।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংক আমানতের সুদ কম হওয়ায় সঞ্চয়পত্রের দিকে বেশি ঝুঁকছে সাধারণ মানুষ। ব্যাংকিং খাতে তীব্র তারল্য সংকট তৈরি হওয়ার পিছনে এটাও একটা মূল কারণ বলে মনে করছেন তারা।
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্যাংকে আমানত রাখলে মুনাফা পাওয়া যায় মাত্র ৫ থেকে ৬ শতাংশের মতো। কিন্তু সঞ্চয়পত্রে টাকা রাখলে মুনাফা পাওয়া যায় ১১ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ কমছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ মাসের শেষে ব্যাংকগুলোর মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ২০ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। তিন মাস আগে অর্থাৎ গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর কাছে আমানত ছিল ১১ লাখ ১৬ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। এই তিন মাসে আমানত বেড়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ, যা টাকার অংকে চার হাজার ১৭ কোটি টাকা। অথচ ২০১৮ সালের প্রথম ৬ মাসে আমানত বেড়েছিল ৫৪ হাজার ২৪১ কোটি টাকা এবং পরের ৬ মাসে বেড়েছিল ৫৬ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে ৩ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। শুধু এপ্রিল মাসে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৭৪১ কোটি টাকার। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা।
আলোচ্য সময়ে (জুলাই-এপ্রিল) আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৮ কোটি টাকা। সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয় ২০ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা।