গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) রেকর্ড পরিমাণ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৩ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।
এনবিআর বলছে, ২৪ জুলাই পর্যন্ত আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও শুল্ক মিলিয়ে এক লাখ ৮৫ হাজার ৩ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে। সংশোধিত হওয়ার পর গত অর্থ বছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা।
জানা গেছে, আগের অর্থ বছরের (২০১৫-১৬) তুলনায় গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ছিল এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসেবে গত কয়েক বছরের মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর আগের ২০১৫-১৬ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ১৪ দশমিক ৬০ এবং ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ।
বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। ২৪ জুলাই পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া গেলে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে।
এনবিআরের হিসাব মতে, খাতভিত্তিক রাজস্ব আয়ের হিসাবে- গত অর্থবছরে আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক থেকে আয় হয়েছে ৫৪ হাজার ৩৩০ কোটি ৪৮ লাখ, স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) থেকে ৬৬ হাজার ৮৯১ কোটি ৪৫ লাখ এবং আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতে ৬৩ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা।
নজিবুর রহমান বলেন, গত অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে নানামুখী চ্যালেঞ্জ ছিল। এর ফলে রাজস্ব আহরণ প্রত্যাশা পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। চ্যালেঞ্জগুলো হলো- ভ্যাট আইন ২০১২ বাস্তবায়নকে সামনে রেখে করদাতা ও ব্যবসায়ীগণকে সুবিধা দেয়ার উদ্দেশ্যে ভ্যাটের চলতি হিসাবের টাকার জের ‘শূন্য’ করে আনা হয়। ফলে মাসের শেষ ৬ থেকে ৭ দিন সাধারণভাবে যে হারে পণ্য খালাস ও রাজস্ব জমা হয়, সেভাবে হয়নি।
“ভ্যাটের মূল রাজস্ব আসে সিগারেট খাত ও মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে। জুন মাসে অপ্রত্যাশিতভাবে এখাতে রাজস্ব আহরণ কমে যায়। এ মাসের শেষ সপ্তাহে রমজান ও ঈদের দীর্ঘ ছুটির কারণে আমদানি পর্যায়ে পণ্য খালাস কম হয়েছে; সে কারণে রাজস্ব আহরণও কম হয়েছে। একইভাবে লম্বা ছুটির নেতিবাচক প্রভাব স্থানীয় ভ্যাট ও আয়কর আহরণের ক্ষেত্রেও পড়েছে।”
‘উৎসে ভ্যাট ও আয়কর’কে রাজস্ব আহরণের অন্যতম খাত উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অর্থবছরের শেষ সময়ে ঈদের র্দীঘ ছুটির কারণে সরকারি-বেসরকারি অফিসে কাজকর্ম কমে যায় এবং রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ে। ব্যাংকিং খাতে ১৪ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির জন্যে আয়কর খাতে রাজস্ব আহরণ হ্রাস পেয়েছে।
“নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নকে সামনে রেখে ভ্যাট ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের কর্মঘন্টার একটা বড় অংশ বিভিন্ন কাউন্সেলিং ও সভা সেমিনারে ব্যয় হয়েছে। ফলে অন্যান্য অর্থবছরের মতো কর্মকর্তাগণ রাজস্ব আহরণে স্বাভাবিক মনোযোগ দিতে পারেননি। এসব কারণে রাজস্ব আদায়ে কিছুটা প্রভাব পড়েছে।”
পেট্রোবাংলা ও বিপিসির কাছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বকেয়া রয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘ দিনের পুঞ্জিভূত এই বকেয়া রাজস্ব পাওয়া গেলে গত অর্থবছরে সরকার নির্ধারিত মূল লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা রাজস্ব অর্জন সম্ভব ছিল।
করদাতা ও দেশবাসীর সহায়তায় চলতি অর্থবছরের নির্ধারিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন এনবিআর চেয়ারম্যান।