মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লকডাউন শিগগিরই তুলে নেওয়া হলে বা শিথিল করলে ‘গুরুতর পরিণতি‘ হবে বলে দেশটির সিনেটরদের সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফৌসি।
এক ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে সিনেটরদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি বলেন, খুব শিগগিরই দেশে সবকিছু চালু হলে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে, যা ভয়াবহ হবে।
ড. অ্যান্থনি ফৌসি বলছিলেন যে, পুনরায় দেশ চালু হওয়ার ব্যাপারে যদি ফেডারেল সরকারগুলো সঠিক গাইডলাইন না মানে, তবে সামান্য ভুলেও করোনা আবারও মহামারী হয়ে উঠবে।
বিবিসি বলছে, ফৌসির এই বক্তব্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্রুত দেশকে স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরিয়ে এনে অর্থনীতি সচল করতে আগ্রহী। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে মতবিরোধও চরমে।
ডঃ ফৌসি মার্কিন সিনেটের রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন কমিটির সঙ্গে ভিডিওর মাধ্যমে কথা বলছিলেন। হোয়াইট হাউসে করোনা হানা দেওয়ার পর তিনি স্বেচ্ছায় বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন এবং বাড়ি থেকেই করোনা মোকাবিলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্য তাদের অর্থনীতি পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে, যদিও সংক্রমণ হ্রাস পায়নি।
এই অবস্থায় অ্যান্থনি ফৌসি পুনরায় চালুর আগে হোয়াইট হাউস টাস্কফোর্সের যে স্বাস্থ্যবিধি আছে, তা মেনে চলতে আহ্বান জানান সিনেটরদের।
নিয়ন্ত্রণ করার সম্ভব হবে না, এমন প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে তিনি হুঁশিযারি উচ্চারণ করে বলেন, অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে এমন উদ্যোগ দেশে করোনার দুর্ভোগ ও মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও লকডাউন তুলে নেওয়ার বিষয়ে পুনরায় বিশ্বকে সতর্ক করেছে। যেসব দেশ লডকাউন শিথিল করছে বা তুলে নিচ্ছে তাদেরকে তিনটি প্রশ্নের জবাব মেলানোর পরামর্শ দিয়ে সংস্থাটি। সেসব জবাব সঠিক না হলে লকডাউন শিথিল করার পর আবার ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে।
সোমবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন।
এর আগে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় লকডাউন বা বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে ছয়টি পরামর্শ দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এবার সেই ছয় পরামর্শের সাথে তিনটি প্রশ্নের জবাব খোঁজারও আহ্বান জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক।
সেই তিনটি প্রশ্ন হলো, মহামারি নিয়ন্ত্রণে এসেছে কি না? সংক্রমণ বাড়লে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বাড়তি চাপ নিতে সক্ষম কিনা? এবং জনস্বাস্থ্য নজরদারি ব্যবস্থা কি রোগী ও তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে ও সংক্রমণ বৃদ্ধি চিহ্নিত করতে সক্ষম?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক বলেন, এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর ইতিবাচক হলেও লকডাউন প্রত্যাহারের বিষয়টি জটিল ও কঠিন।
এমন একটা সময় যুক্তরাষ্ট্র লকডাউন শিথিল করার উদ্যোগ নিচ্ছে যখন হোয়াইট হাউসেই করোনা হানা দিয়েছে। শুধু তাই নয় রোববার ও সোমবার করোনার মৃত্যু হাজারের নিচে নেমে আসার পর গত ২৪ ঘণ্টায় তা পুনরায় প্রায় ২ হাজারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১৪ লক্ষাধিক এবং মৃত্যু হয়েছে ৮৩ হাজার ৪২৫জন।
সারাবিশ্বে করোনা আক্রান্ত ৪৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে এবং মৃত্যু প্রায় ৩ লাখ।