করোনাভাইরাস বাংলাদেশে যেভাবে দ্রুত ছড়াচ্ছে এর সংক্রমণরোধে কিভাবে পদক্ষেপ নেয়া যায়, তা নিয়ে গবেষণা করার সময় এখন আর নাই। সেটা বরং আমাদের জন্যে খারাপই বয়ে আনবে। মৃত্যুর মিছিলকে দীর্ঘ করতে সহায়তাই করবে।
তাই এই মুহুর্তেই কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। সেটার জন্যে পরিশ্রমী এবং উদ্যোগী মানুষের প্রয়োজন। কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী -এ রকম একদল মানুষ।
লকডাউন নিয়ে আমরা এখনো ধোঁয়াশার মধ্যেই আছি। কোন এলাকাকে লাল জোন, কোন এলাকাকে হলুদ জোন আর কোন এলাকাকে সবুজ জোন হিসেবে দেখানো হবে সেটা নির্বাচন নিয়েও চলছে আলাপ আলোচনা। কারা নির্ধারণ করবে কোন এলাকার লোক সংখ্যা কত? কতজন করোনা আক্রান্ত হলে সেই এলাকাকে লাল জোন ধরা হবে, সেটার ব্যাপারেও সুষ্পষ্ট কোনো নির্দেশনা এখনো জনপ্রতিনিধিরা জানে না।
১৫ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে বলা হয় নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিবেচনায় লাল হচ্ছে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ, হলুদ হচ্ছে মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ। এই দুই এলাকায় সাধারণ ছুটি থাকবে। কিন্তু ওইদিন বিকেলেই আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বলা হয়েছে লাল জোনে ছুটি থাকবে। যেমন ১৬ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ছুটি চলার কথা। কিন্তু ঢাকা শহরের লোকজনের চলাচল দেখলে বোঝার উপায় নেই কোন এলাকা লাল জোন। কোন এলাকা সাধারণ ছুটির আওতায় পড়েছে।
আরেকটি বিষয়, গত ১৫ মে পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজার কমিটি করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহর এলাকায় লকডাউন করার পরামর্শ দেয়। সেই পরামর্শ অনুযায়ী প্রায় এক মাস পর ১১ জুন লকডাউন নিয়ে কাজ করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে প্রধান করে ১৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কারিগরি গ্রুপ করা হয়েছে। তারা রাজধানীর ৪৫টি এলাকাকে লাল জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই বিষয় থেকে কি বোঝা যায় না-লকডাউন বা করোনার বিস্তাররোধে আমাদের মধ্যে কোথায় যেন একটা গা ছাড়া ভাব রয়েছে?
সব মিলিয়ে মনে হয় করোনার সংক্রমণরোধে শুরু থেকেই সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের একটু গাফিলতি বা ঢিলেঢালা আচরণ ছিল। দেখি না কি হয়, দেখি না কি হয়- আচরণের জন্যেই আজ বানের পানির মত করোনা আক্রান্তের যেন ঢল নেমেছে দেশে। প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। এই সংখ্যা নিয়েও আবার কারো কারো ভেতর মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করে এ সংখ্যা দ্বিগুনেরও বেশি। কারণ অনেক মানুষ করোনা পরীক্ষা করতে এসে ফিরে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় ঠিক কতজন আক্রান্ত হচ্ছে সেই হিসেব রাখারও লোকের অভাব রয়েছে। সব মিলিয়ে মানুষের ভেতর আতঙ্ক বিরাজ করছে।
লকডাউন কতটা জরুরি সেটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের ভেতর আগ্রহের অভাব দেখা যাচ্ছে। তবে সচেতন মানুষেরা মনে করেন দ্রুত রাজধানীতে লকডাউন করে দেয়া দরকার। লকডাউন দরকার দেশের অনেক অঞ্চলেই।
লকডাউন কি? সেটার ব্যাপারেও কঠোর হতে হবে। সাধারণ মানুষকে বোঝাতে পারলেই সেই মানুষকে নিয়েই লকডাউন যথাযথভাবে পালন করা যাবে। আর তা না হলে লকডাউনের প্রকৃত মানে না বুঝে মানুষ তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন চালাতে গিয়ে মৃত্যুর মিছিলেই নাম লেখাবে। দেশে করোনা সংক্রমণের যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে এখনই লকডাউন জরুরি। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর হস্তক্ষেপ ছাড়া লকডাউন সম্ভব না।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)