বিরাট কোহলি শূন্যহাতে ফিরেছেন, তাতে কিছুই হয়নি! যা করার আগেই যে করে ফেলেছেন রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল। পরে তাল মেলান শ্রেয়াস আয়ার ও রিশভ পান্ট। চার-ছক্কার বৃষ্টি বিশাখাপত্তমে, রান হল পাহাড়সম। জবাবে একটা সময় তালে তাল মিলিয়ে চললেও পা পিছলে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তারা হেরেছে ১০৭ রানের বড় ব্যবধানে। পথে কুলদ্বীপ যাদব করেছেন হ্যাটট্রিক। এ লেগস্পিনার হয়েছেন প্রথম ভারতীয় হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব ফরম্যাটে দুটি করে হ্যাটট্রিকের মালিক।
দুই ওপেনারের সেঞ্চুরিতে উদ্বোধনী জুটিতে ২২৭ রান উঠতেই বোঝা যাচ্ছিল রান উৎসব করতে চলেছে ভারত। হয়েছেও সেটাই, উৎসব থেমেছে ৫ উইকেটে ৩৮৭ রান তুলে। পরে ৩ উইকেটে ১৯২ রান তুলে জবাবটা ভালোই দিচ্ছিল ক্যারিবীয়রা। এরপরই ছন্দ হারিয়ে ২৮০ রানে থামে সফরকারীদের ইনিংস।
অথচ ম্যাচের শুরুতে চাপ নিয়ে মাঠে নেমেছিলো ভারতই। চেন্নাইয়ে প্রথম ওয়ানডেতে হেরে যাওয়ায় সিরিজ বাঁচাতে বিশাখাপত্তমে ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া উপায় ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে রোহিত ও লোকেশ মিলে বুঝিয়ে দিলেন চাপকে তারা পাত্তা দেন না!
শুরুতে রয়েসয়েই খেলেছেন রোহিত-রাহুল। ১৯তম ওভারে ৯৫ রান ওঠে। ২১তম ওভারে ১৪ রান তুলে দলীয় শতক পূর্ণ করার পর হাত খুলেছেন দুজনই। মাতেন কে কত দ্রুত রান তুলতে পারেন তার প্রতিযোগিতায়!
তাতে কিছুটা পিছিয়ে ছিলেন রোহিত। এমনকি ফিফটিও পেয়েছেন রাহুলের অনেক পরে। ফিফটি পেয়েই ক্যারিবীয় বোলারদের উপর চড়াও হন। ৬৭ বলে ফিফটি পাওয়া ডানহাতি ‘হিটম্যান’ ক্যারিয়ারের ২৮তম সেঞ্চুরি পেয়েছেন ১০৭ বলে। অর্থাৎ, পরের পঞ্চাশ পেয়েছেন মাত্র ৪০ বলে।
সেঞ্চুরি পেতে সময় নেননি রাহুলও। শুরুতের রোহিতের তুলনায় আগ্রাসী ছিলেন, সেঞ্চুরি তুলেছেন ১০২ বলে, সেটাও চার মেরে। দুজনের জুটির ডাবল সেঞ্চুরিতে হয়েছে রেকর্ড, ওয়ানডেতে ষষ্ঠবারের মতো ওপেনিংয়ে ডাবল সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব।
সেঞ্চুরির পর দ্রুতই সাজঘরে ফিরেছেন রাহুল। ১০৪ বলে তার ১০২ রানের ইনিংসটিতে ৮ চারের সঙ্গে ছক্কা মেরেছেন ৩টি। রাহুল ফেরার পরের ওভারে নিজের প্রথম বলেই বিরাট কোহলি ফেরেন কোনো রান না করেই।
দুই সঙ্গীকে হারালেও রোহিত খেলে গেছেন নিজের মতো করেই। ১৩২ বলে ছুঁয়েছেন দেড়শো রানের মাইলফলক। যেভাবে এগোচ্ছিলেন তাতে চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরি পাওয়াটাও কঠিন ছিল না তার জন্য।
শেষপর্যন্ত আরেকটি ডাবল সেঞ্চুরি পাওয়া হয়নি রোহিতের। থেমেছেন ১৩৮ বলে ১৫৯ রানের ইনিংস খেলে। ১৭ চারের সঙ্গে ৫ ছক্কায় অবশ্য রেকর্ডও গড়েছেন, মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ছাড়িয়ে নিজেদের মাটিতে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড এখন তারই।
রোহিত ফেরার পর বোলারদের বেধড়ক পেটানোর ভারটা নিয়েছেন শ্রেয়াস আয়ার ও রিশভ পান্ট। ৩০ বলে দুজনের ৭৩ রানের জুটিতে বিশাল সংগ্রহ পায় ভারত। পান্ট-আয়ার দুজনেই মেরেছেন চারটি করে ছক্কা। এর মধ্যে ৪৭তম ওভারে ৩০ রান তুলেছে ভারত, যা কিনা ওয়ানডে ইতিহাসে তাদের এক ওভারে তোলা সর্বোচ্চ রান। ৩২ বলে ৫৩ করেছেন আয়ার, ১৬ বলে ৩৯ করে আউট হয়েছেন পান্ট।
ক্যারিবীয় ইনিংসের শুরুটা দারুণ হলেও ৮৬ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় দলটি। সেখান থেকে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১০৬ রান তুলে দলকে ভালোমতই ম্যাচে রেখেছিলেন শাই হোপ ও নিকোলাস পুরান।
হোপ ৭৮ ও পুরান ৪৭ বলে ৭৫ করে ফিরতেই ধস ক্যারিবীয় ইনিংসে। এরমধ্যে অধিনায়ক কাইরেন পোলার্ড শূন্য রানে ফিরলে হার সময়ের ব্যবধান হয়ে দাঁড়ায় দলটির। শেষদিকে ৪২ বলে কিমো পলের ৪৬ রান কেবল ব্যবধানই কমিয়েছে।
রোহিত-রাহুলের দিনে কম যাননি কুলদ্বীপ যাদব। ৩৩তম ওভারে হোপ, জেসন হোল্ডার আলঝারি জোসেপকে ফিরিয়ে তুলে নিয়েছেন হ্যাটট্রিক। যাদবই প্রথম ভারতীয় যার কিনা হল সব ফরম্যাটে দুটি করে আন্তর্জাতিক হ্যাটট্রিক। এর আগে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়েও হ্যাটট্রিক পেয়েছিলেন এ বাঁহাতি লেগস্পিনার।
তিন ম্যাচের সিরিজে এখন ১-১’এ সমতা। সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচটি হবে কট্টকে, রোববার।