রোহিঙ্গা শিশু নোমানের বয়স মাত্র চার বছর। জীবন সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছু বুঝে উঠার আগেই অনেক পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির থেকে অনেক বেশি যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে তাকে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা নোমানের মতো সব রোহিঙ্গা শিশুরই কোন না কোন ভীতিকর স্মৃতি রয়েছে।
জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা এই শিশুদের জন্য ইউনিসেফের সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে শিশুবান্ধব আশ্রয়কেন্দ্র। মঙ্গলবার ঠেংখালির হাকিমপাড়া আশ্রয় শিবিরে ইউনিসেফের সহায়তায় পরিচালিত এমনই একটা শিশুবান্ধব কেন্দ্রে এসেছিল নোমান। সঙ্গে এসেছিল তার বড় বোন কাউসারা । যার বয়স ৯ বছর। চার ভাই বোনের মধ্যে কাউসারা সবার বড়।
সে জানায়: আমাদের সামনে যখন বাবাকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মেরে ফেললো, আমার মা তৎক্ষণাৎ আমাদেরকে নিয়ে মিয়ানমার ছেড়ে পালিয়ে আসে। জঙ্গল ও পাহাড় পাড়ি দিয়ে আমাদের যাত্রাটা খুব ভয়াবহ ছিল।
‘যেহেতু আমার বাবাকে মেরে ফেলা হয়েছে, ছোট ভাই-বোনদের দেখাশোনা আমারই করতে হয়। আমাকে বড়দের সাথে ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয় শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য। এখনও বলতে পারি না ভবিষ্যতে কী আছে আমাদের কপালে।’
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2024/02/Channeliadds-Reneta-16-04-2024.gif?fit=300%2C250&ssl=1)
ইউনিসেফের তথ্যমতে: গত আগস্টে হামলা শুরুর পর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ৬০ শতাংশই শিশু। নৃশংসতার সম্মুখীন হওয়ায় চরম মানসিক অসুস্থতার ঝুঁকিতে থাকা এই শিশুকিশোরদের স্বাভাবিক রাখার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (কোডেক) নামের স্থানীয় একটি এনজিও সংস্থা ইউনিসেফের সঙ্গে মিলে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য তৈরি এই ধরনের নিরাপদ এলাকা পরিচালনা করছে।
এছাড়া কক্সবাজারে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আরও বেশ কয়েকটি এ জাতীয় ‘চাইল্ড ফ্রেন্ডলি স্পেস’ (সিএফএস) এবং স্কুল চালু করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ড এবং নির্যাতনের ভয়াবহতা থেকে পালিয়ে আসা শিশুকিশোরদের মানসিক আঘাত ও ট্রমা থেকে বের করে আনতে যতটা সম্ভব কাজ করে যাচ্ছে ইউনিসেফ এবং স্থানীয় ত্রাণ সংস্থাগুলোর সহায়তায় পরিচালিত এই সেন্টারগুলো। এদের মূল উদ্দেশ্য, ছেলেমেয়েগুলো যেন একে অপরের সঙ্গে মেলামেশার মাধ্যমে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।এখানে কাজ করা মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত শিশুসহ সব বয়সী রোহিঙ্গার মাঝেই হঠাৎ করে ভয়াবহ ঘটনার স্মৃতিগুলো মনে পড়ে যাওয়া, উৎকণ্ঠা, অস্থিরতা, বারবার দুঃস্বপ্ন, অনিদ্রা, খেতে ও কথা বলতে না পারা এবং আরও বেশি জটিল কেসে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের দিকে নজর দিতে না পারার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাদের সবাইকে প্রথমে এটাই বোঝানো হচ্ছে যে, তারা এখানে নিরাপদ ও সুরক্ষিত এবং তারা একা নয়।
ছবি: ইউনিসেফ।