চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদকে পাশে চায় বাংলাদেশ

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে চীন, রাশিয়া, ভারত ও জাপানের কাছ থেকে বড় ধরনের ভূমিকা পালনের আশা করছে বাংলাদেশ।

সোমবার গণভবনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি গুস্তাবো আদোলফো মেসা কুয়াদ্রা ভেলাসকাসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধদলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান নিয়ে চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, লাওসসহ মিয়ানমারের প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথাও বৈঠকে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারকে জোরালো চাপ সৃষ্টিরও আহ্বান জানিয়েছেন।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার যে চুক্তি করেছে সে অনুযায়ী মিয়ারমারের কাজ করা উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

মিয়ানমার-জাতিসংঘ-বাংলাদেশ
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহযোহিতা ও সাহায্য সম্প্রসারণ করায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রশংসাও করেন প্রধানমন্ত্রী। 

গত বছরের অগাস্টে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযান শুরুর পর রোহিঙ্গাদের ঢল নামে বাংলাদেশ সীমান্তে। মানবিক দিক বিবেচনা করে সীমান্ত খুলে দিয়ে তাদের আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ সরকার।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মুখে মিয়ানমারের সৈন্যদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে হত্যা, বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেওয়া ও ধর্ষণের অভিযোগ উঠে আসে। জাতিসংঘ কর্মকর্তারা একে জাতিগত দমন অভিযান হিসেবে বর্ণনা করেন।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখে মিয়ানমার সরকার এই শরণার্থীদের ফেরত নিতে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও চুক্তি বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই।

শরণার্থী প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরু করতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে আসেন।

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি কেলি কারি বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে মানবিক দিক থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য নতুন একটি স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করে দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে বলে জানান চীনের প্রতিনিধি য়ু হাইতাও।

জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

রাশিয়ার প্রতিনিধি দিমিত্রি পোলিয়ানস্কি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনের কথা উল্লেখ করে রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে তাদের সমর্থন সম্প্রসারনের আশ্বাস দেন।

প্রেস সচিব বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ সংঘাত চায় না এবং এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করছে।”

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমার সফর এবং মিয়ারমানের সমাজ কল্যাণমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হতে হবে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্ট্রিক নিবন্ধন করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের চাপে স্থানীয়রা ভোগান্তিতে পড়েছেন এবং পরিবেশ ও বনভুমিরও ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। 

এছাড়া বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গাদেরও দুর্দশা বাড়ার আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেন তিনি। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পূর্নবাসন কেন্দ্র গড়ে তোলার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক প্রমূখ।