রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের সমস্যা। সেটা এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশেরও। তবে সেটা প্রভাবিত করছে সারাবিশ্বকে।
রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সারাবিশ্ব যেন দুই ভাগে ভাগ হয়ে পড়ছে। একদল বাংলাদেশকে প্রবল সমর্থন দিলেও, অন্যদল সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের বিপক্ষে। বিশ্বের মহা শক্তিধর দুটি রাষ্ট্রের একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদেরকে জায়গা দেওয়ায় বাংলাদেশকে প্রশংসা জানিয়েছে। আর রাশিয়া এই জায়গায় বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে। একে মিয়ানমারের ‘নিজস্বব’ বিষয় উল্লেখ করে সেখানে কাউকে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়ছে রাশিয়া।
একই পরিস্থিতি ভারত ও চীনের ক্ষেত্রেও। এই সমস্যায় বাংলাদেশের প্রতি পূর্ণ সমর্থন আছে বলে ভারত জানালেও চীন-মিয়ানমার পুরনো বন্ধু।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান এহসানুল হক বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে, ব্যাপারটা তা না। চীন ও রাশিয়া এটাকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে দেখছে। অন্যরা যেভাবে নিচ্ছে সেভাবে চীন ও রাশিয়া নিচ্ছে না।
‘তবে যেটা মিয়ানমারের ভ্যন্তরীণ সমস্যা সেটাই বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করেছে, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের অবস্থাও তৈরি করেছে। তাই এটা অবশ্যই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ প্রত্যাশা করে।’
তবে আরো কিছুদিন সময় পেলেই এসব দেশ তাদের ভুলটা বুঝতে পারবে বলে মনে করেন তিনি। ‘আরো কিছুদিন সময় গেলে তারা অনুধাবন করতে পারবে, এটা শুধু মিয়ানমার নয়– অনান্য দেশের জন্যও জরুরি। তাই সেটা সমাধান করা জরুরি।’
রোহিঙ্গা সমস্যাকে সাময়িক একটি সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে এর একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে। সেটা বাংলাদেশ তো বটেই সারাবিশ্বের উপরও। তাই বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বকেই এই ব্যাপারে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।
রাশিয়ার আগে চীনের সমর্থন পাওয়া বাংলাদেশের জন্য জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ব রাজনীতিতে চীন অনেক উচ্চাভিলাষী। তারা মনে করে, তাদের সক্ষমতা রয়েছে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার। তাই এ ধরনের পরিস্থিতি তাদের অবস্থান নাজুক করছে। সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে করছে। ফলে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যে সম্ভাবনা চীনের রয়েছে সেটার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে রোহিঙ্গা সমস্যা।
জাতিসংঘে মিয়ানমারের ব্যাপারে নিন্দা আসবে বা বাংলাদেশ তার অবস্থান জানাবে। সেখানে চীন তাদের অবস্থান থেকে সরে আসবে বলে মনে করেন এহসানুল হক।
‘রাশিয়ার অবস্থান অনেকটাই ভিন্ন। তারা মনে করে মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক লেনদেন রয়েছে। সেটা তাদের রক্ষা করতে হবে। চীন ও ভারতের সাপোর্টটা আমাদের জন্য সবচেয়ে সহায়ক হবে এগিয়ে যেতে। চীনের সমর্থন পেলে আমাদের স্বার্থের পক্ষে কিছুটা কাজ হবে বলে মনে করি।’
সাংবাদিক ও শিক্ষক আনিস আলমগীর বলেন, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে এখন সবাই যার যার স্বার্থ দেখছে। রোহিঙ্গা সমস্যার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকায় সবাই প্রশংসা করছে। কিন্তু সবাই নিজের স্বার্থ বুঝে যার যার মতো খেলছে।
‘মিয়ানমারের সমস্যা মিয়ানমার সমাধান করুক, কোনো দেশের এটা বলার মানে হচ্ছে তারা মিয়ানমারকে সমর্থন নিচ্ছে। আর বিশ্বব্যাপী দেশগুলোর মধ্যে যে দ্বন্দ্ব সেটা তো আছেই। এবার সেটা কোন পর্যায়ে যাবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না,’ বলে মনে করেন সাবেক এ কূটনৈতিক প্রতিবেদক।