রাখাইনে মিয়ানমারের বর্বরতা শুরু হওয়ার পর আশার আলো হয়ে দেখা দিয়েছিল বাংলাদেশ-মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি। তবে এই চুক্তির আগে থেকেই টালবাহানা করে আসছিল মিয়ানমার। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের অব্যাহত কূটনৈতিক তৎপরতায় তারা দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করতে বাধ্য হলেও চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ২৩ জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তির শুরু থেকে প্রতিদিন ১শ’ রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ার কথা বলে আসছে তারা। পরবর্তীতে সেটা ৩শ’ করে মিয়ানমার। তাদের কথা যদি ধরা হয়, তাহলে নতুন করে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় ১০ বছর সময় লেগে যাবে! এটা কখনোই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। এছাড়া আরও বেশ কিছু বিষয়ে ‘মামাবাড়ির আবদার’ তুলে সময়ক্ষেপণের চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় নির্লজ্জের মতো বাংলাদেশকেই দুষছে তারা। মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাউং তুন বলেছেন: ‘রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ দেরি করছে। ধারাবাহিকভাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিদিন ৩শ’ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার কথা উল্লেখ করে থাউং তুন বলেন: প্রথম ধাপের অগ্রগতির উপর ভিত্তি করে এ সংখ্যা আরো বাড়ানো হতে পারে।’ আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দেরি হওয়ার সম্পূর্ণ দায় মিয়ানমারের, বাংলাদেশের নয়। মাত্র কয়েকদিনে লাখ লাখ মানুষকে ঘরছাড়া করে সীমান্ত এলাকায় মানবিক সংকট সৃষ্টি করে ১০ বছরে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার আবদার তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। মানবতার সঙ্গে মিয়ানমারের এই তামাশা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মিয়ানমারের এই রঙ তামাশা বন্ধ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বাংলাদেশকে আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। প্রতিবেশির সঙ্গে ঝামেলার বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সমাধানে বাংলাদেশ আগ্রহী হলেও দুষ্ট প্রতিবেশি মিয়ানমার তাকে যাতে দুর্বলতা ভাবতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে আবারও আন্তর্জাতিক ফোরামে মিয়ানমারকে কোণঠাসা করতে হবে। আমরা অতি দ্রুত এই মানবিক সংকটের সমাধান দেখতে চাই।