রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মুসলিম দেশগুলোর জোট ওআইসিকে জোরালো ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন: দীর্ঘ সময় ধরে রোহিঙ্গাদের অবস্থান বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং পরিবেশকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ওআইসি এবং জাতিসংঘে সৌদি আরবের স্থায়ী মিশন আয়োজিত রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সাইডলাইন সভায় এ আহবান জানান তিনি।
সৌদি আরবের স্থায়ী মিশন ও ওআইসি সচিবালয় যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সভায় ওআইসির মহাসচিব ড. ইউসেফ বিন আহমাদ আল ওথাইমেলও বক্তৃতা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন: রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লংঘনের বিষয় মোকাবেলায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও মানবাধিকার কাউন্সিলের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ সহ জাতিসংঘ ব্যবস্থাপনায় ওআইসি দেশগুলোর অব্যাহতভাবে জড়িত থাকার বিষয়ে বাংলাদেশ গুরুত্বারোপ করেছে। স্বল্পতম সময়ে আমাদের এ সমস্যার সমাধান করা আবশ্যক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন: গৃহহীন ও নিরাশ রোহিঙ্গাদের জন্য এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে গত সেপ্টেম্বরে ৫ দফা কর্মপরিকল্পনার প্রস্তাব করেছি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এখনো শুরুই হয়নি। এ বছর কতিপয় সুস্পষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ওআইসি সদস্য দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানান।
শেখ হাসিনা আবারো রোহিঙ্গা সংকটকে মিয়ানমারে গভীরভাবে প্রোথিত একটি রাজনৈতিক সংকট হিসেবে উল্লেখ করে বলেন: এর সমাধানও মিয়ানমারকেই খুঁজে বের করতে হবে। রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনই কেবল এ সমস্যার একমাত্র টেকসই সমাধান নয়, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধের আগে বরং পরিস্থিতির অবনতির দুটি প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে। এই প্রশ্নগুলো হচ্ছে: যৌথ দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা এবং মিয়ানমার কর্তৃক এই রোহিঙ্গাদের অধিকার ও প্রাধিকারসমূহ নিশ্চিত করার প্রশ্ন।
শেখ হাসিনা বলেন: আমার সরকার নৈতিক এবং মানবিক কারণে সীমান্ত খুলে দিয়ে ও জরুরি সহায়তা দিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ এবং নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করেছে। এ কারণে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি দীর্ঘায়িত হতে পারে না। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা এই সমস্যা শুরু থেকেই সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে মিয়ানমারের সাথে আলোচনা করে আসছি। তবে তাদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া আমরা পাচ্ছি না। এ সমস্যা সমাধানে শুধুমাত্র দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় কোন সুফল বয়ে আসবে না। এ জন্য অন্তর্জাতিক উদ্যোগ প্রয়োজন। কেবলমাত্র আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার তার অবস্থানের পরিবর্তন করতে পারে।
শেখ হাসিনা এ বিষয়ে বলিষ্ট ভূমিকা রাখতে ওআইসি’র প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন: ওআইসি সদস্য দেশগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে সারা বিশ্বে মুসলমানরা কেন এভাবে নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মুসলমানরা কেন একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। যদি কোন সমস্যা থেকেই থাকে তবে তা দ্বিপাক্ষিক অথবা আঞ্চলিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।