চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কী হবে?

গতবছর এপ্রিলে ডি-৮ দেশগুলোর প্রতি এবং সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে পুরো বিশ্বকে তাদিগ দিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বিভিন্ন ফোরামে প্রত্যাবাসন বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, রোহিঙ্গাদের যে মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে, এই বিষয়টি ধীরে ধীরে অসম্ভব মনে হচ্ছে।

পুরোপুরি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ একটা দেশের পক্ষে ১ মিলিয়নের অধিক রোহিঙ্গার দীর্ঘমেয়াদে চাপ সামাল দেয়া অসম্ভব। তারপরেও রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের মানবিক আচরণ ও আশ্রয় সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু এখন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন খুবই জরুরি।

রোহিঙ্গাদের জন্য সবচেয়ে বেশি সম্পদ ব্যয় করছে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য অনেক দেশ তাদের দেখ-ভালের জন্য জাতিসংঘকে অর্থ প্রদান করে। এই অর্থ প্রদানের পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে এবং এর ফলে বাড়তি বোঝা বাংলাদেশের ওপর চাপানোর একটি চেষ্টা আছে বিদেশিদের। এমনকি তারা রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্যের পরিবর্তে ঋণ দেয়ারও চেষ্টা করছে! সেইসঙ্গে বিদেশি অর্থদাতারা চাইছে রোহিঙ্গাদের উপার্জনের ব্যবস্থা, যাতে করে নিজেদের ব্যয় তারা নিজেরাই মেটাতে পারে। এছাড়া তাদের জন্য শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি, অবাধ চলাচলের বিষয়েও তারা জোর দিচ্ছে। এজন্য রোহিঙ্গাদের সিভিল নিবন্ধন অর্থাৎ পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধনসহ অন্যান্য বিষয় চালু করার প্রস্তাব করছে তারা। যদিও বাংলাদেশ শক্ত অবস্থানে থেকে ওইসব প্রস্তাব নাকচ করেছে। সার্বিক বিবেচনায় বিষয়গুলো মারাত্মক নেতিবাচক বলে আমরা মনে করি।

বাংলাদেশে যখন কোনো বিদেশি প্রতিনিধি আসে বা কোনো আন্তর্জাতিক ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়, তখন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আলোচিত হয়, গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়। এর বাইরে পুরো সময়টা তেমন একটা কার্যকর কিছু চোখে পড়ে না। এছাড়া জাতিসংঘ ও মানবধিকার সংগঠনগুলো রোহিঙ্গাদের ওপর চলা জাতিগত নিধন নিয়ে সোচ্চার হলেও প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে সেভাবে চাপ দিচ্ছে না। নিজ নিজ ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে চীন ও ভারত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের গণহত্যা নিয়ে একেবারে চুপ, উল্টো চীন জাতিসংঘের ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করে মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিবৃতিতে সোচ্চার হলেও তাদের ফান্ডেড সংগঠন আইএমএফ ঠিকই মিয়ানমারকে অর্থসহায়তা দিচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন রোহিঙ্গাদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও ইউরোপের দেশসমূহ মিয়ানমারে বিনিয়োগ করছে। এমনকি ভাসানচরে তাদের স্থানান্তরেও বাধা দিচ্ছে তারা। এ বিষয়গুলোতে প্রয়োজন আরও সতর্ক কূটনৈতিক পদক্ষেপ।

আমাদের আশাবাদ বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের মানবিক সঙ্কটের বিষয়ে যথাযথ নজর দেবার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে প্রয়োজনীয় যা যা করণীয় তা করবে। যাতে করে বর্তমানে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে ঘিরে সামাজিক, পরিবেশ ও অর্থনেতিক যে চাপ তৈরি হয়েছে তা থেকে মুক্ত হবে বাংলাদেশ।