রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের গণহত্যা মেনে নেয়া যায় না বলে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) জানিয়েছে গাম্বিয়া। ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধন চালিয়েছে মিয়ানমার-এমন অভিযোগ এনে গণহত্যা বন্ধের নির্দেশ দিতে আইসিজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পশ্চিম আফ্রিকার দেশটি।
মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে অভিযোগে গত ১১ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলা দায়ের করে গাম্বিয়া। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে গণহত্যা, গণধর্ষণসহ মানবাধিকার লংঘন করেছে অভিযোগে ওই মামলা করা হয়।
বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় আন্তর্জাতিক আদালতে ওই মামলার শুনানিতে অংশ নেয় গাম্বিয়া। গাম্বিয়ার পক্ষে মামলায় প্রতিনিধিত্ব করেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু। শুনানির শুরুতে প্রধান বিচারক সোমালিয়ার নাগরিক আব্দুলকায়ি আহমেদ ইউসুফ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনান।
এতে ২০১৭ সালে রাখাইনে মিয়ানমার জাতিগত নিধন চালানোর অভিযোগ এনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক আইনের বৃদ্ধি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে। ওই গণহত্যা বন্ধের নির্দেশ দিতে আইসিজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পশ্চিম আফ্রিকার দেশটি।
মিয়ানমারের পক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়ে নেদারল্যান্ডস গেছেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি। বুধবার মিয়ানমারের পক্ষে তিনি তার অবস্থান তুলে ধরবেন। আজকের শুনানির সময় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে উপস্থিত ছিলেন মিয়ানমারে গণতন্ত্রের দাবিতে অহিংস আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সুচি।
তার প্রতি সমর্থন জানিয়ে রাজপথে নেমে মিছিল সমাবেশ করেছে মিয়ানমারের হাজারো মানুষ।
ও দিকে আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যা মামলার শুনানির আগে মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বিশ্বব্যাপী প্রচারণা শুরু করেছে ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনসহ বিভিন্ন দেশে সক্রিয় থাকা রোহিঙ্গাদের বেশ কিছু সংগঠন। মিয়ানমারকে বয়কট করার আহবান জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।
রোহিঙ্গা নির্যাতন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলার শুনানির সময় বিচারের রায়টা যেন তাদের পক্ষে আসে সেজন্য কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রার্থনা করেছেন রোহিঙ্গারা।
গাম্বিয়াকে সর্বিক সহায়তা দিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদ বিন মোমেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকেও একটি প্রতিনিধি দল নেদারল্যান্ডস গেছেন।
মঙ্গলবার গাম্বিয়া তার বক্তব্য উপস্থাপনের পর বুধবার মিয়ানমার তার অবস্থান তুলে ধরবে। বৃহস্পতিবার সকালে গাম্বিয়া এবং বিকালে মিয়ানমার প্রতিপক্ষের যুক্তি খণ্ডে চূড়ান্ত বক্তব্য পেশ করবে।
এই মামলার রায় পেতে অপেক্ষা করতে হবে আট সপ্তাহ পর্যন্ত। আর চূড়ান্ত রায় পেতে কয়েক বছরও লেগে যেতে পারে।