জাতিগত নিধনের উদ্দেশ্য মিয়ানমার সরকার ও দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের কয়েক হাজার মানুষকে ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যার অভিযোগে মামলা করেছে গাম্বিয়া।
সোমবার জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে মামলা করেছে ওআইসিভুক্ত এই দেশটি।
হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে দায়ের করা মামলায় গাম্বিয়া বলেছে, জাতিগত নির্মূল করণে মিয়ানমার যে হত্যা চালিয়েছে তা গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে। তার জন্য মিয়ানমারের শাস্তির দাবি করা হয়েছে আদালতের কাছে।
এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা নিপীড়নের জন্য সমালোচনার মুখে থাকা মিয়ানমার প্রথম আন্তর্জাতিক কোনো আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।
৪৬ পৃষ্ঠার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ এবং তাদের আবাস ধ্বংসের কথা বলেছে গাম্বিয়া।
রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও (আইসিসি) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এরমধ্যেই জাতিসংঘের আদালতে মামলা করল আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া।
যদি আইসিজে মামলাটি বিচারের জন্য গ্রহণ করে, তবে এটাই হবে গণহত্যার নিজস্ব তদন্তে আইসিজের প্রথম উদ্যোগ। এর আগে তদন্তের ক্ষেত্রে তারা অন্য সংস্থার উপর নির্ভর করত।
আইসিজের বিধি অনুসারে, জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ তুলতে পারে।
পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি ছোট দেশ গাম্বিয়া। ৫৭টি ইসলামিক দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি এর পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করার জন্য গাম্বিয়াকে বেছে নেওয়া হয়।
গত মার্চে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ করেছে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। আবুধাবিতে ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ৪৬তম বৈঠকের শেষদিনে প্রস্তাবটি অনুমোদন লাভ করে।
গণহত্যা প্রতিরোধ ও এর শাস্তি বিধানে ১৯৮৪ সালে স্বাক্ষরিত কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। ১৯৫৬ সালে ওই ‘জেনোসাইড কনভেনশনে’ সই করে মিয়ানমার।
রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য মিয়ানমারকে বিচারের আওতায় আনতে যে ১০টি সংগঠন গাম্বিয়াকে সহায়তা করছে, তাদের একটি হল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
জাতিসংঘের তথ্য মতে, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।