মায়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের উপর গণহত্যার মতো নৃশংস অপরাধের দায়ে মুসলিম দলগুলোর একটি জোট নিউইয়র্কের একটি আদালতে মামলা দায়ের করেছে। গণতন্ত্রের দিকে মায়ানমারের অগ্রসরের অন্যতম পদক্ষেপ জাতীয় নির্বাচনের মাত্র একমাস আগে এই মামলা দায়েরের ঘটনাটি ঘটলো।
যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি অন্যায় সংবিধির অধীনে প্রেসিডেন্ট সেইন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী উনা মাউং লোয়িন এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদেরকে তলব করার আবেদন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাজিস্ট্রেট জাজ ডেবরা ফ্রিম্যানের আদালতে বৃহস্পতিবার এই অভিযোগটি দায়ের করা হয়। অতীতেও এই বিধানটি বিদেশি নাগরিকেরা ব্যবহার করেছিলো যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে মানবাধিকার লঙ্ঘণের অপরাধের বিচারের জন্য।
১৯ টি মুসলিম দলের একটি জোট এবং মায়ানমার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের একজন সদস্য দ্বারা গঠিত বার্মা টাস্ক ফোর্স বাদি হয়ে এই মামলাটি দায়ের করে। মামলায় দাবি করা হয় তারা এবং তাদের আত্মীয় স্বজনেরা গণহত্যা, নির্যাতন, নির্বিচারে আটক, নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতা এবং কর্মকর্তাদের দ্বারা নিগৃহের শিকার হয়েছেন।
মামলাটিতে অভিযোগ করা হয়েছে রোহিঙ্গারা বিদ্বেষমূলক অপরাধের প্রাথমিক লক্ষ্য এবং এই বৈষম্য চরমপন্থি জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ সন্নাসী এবং থেইন সেইন সরকারকে গণহত্যার মতো অপরাধে উস্কানি দেয়।
১৯৬২ সাল থেকে বার্মান বৌদ্ধ আধিপত্যবাদী মায়ানমার সরকার বিভেদমূলক, স্বৈরাচারি আদর্শে দেশ শাসন করে আসছে উল্লেখ করে মামলাটিতে অভিযোগ করা হয়েছে, বৌদ্ধ ধর্ম প্রধান মায়ানমারে মুসলিম ধর্মের অনুসারি রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব পায়নি এবং তাদের জাতিগত বিশ্বাসের কারণে নৃশংস নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
গুরপাতওয়ান্ত পান্নুনি নামক এক আইনজীবীর ফার্ম এই অভিযোগটি দায়ের করে। পান্নুনি সমন নামা প্রেরণ করা হবে বলে জানান। সমন পাঠানোর পর থেকে প্রেসিডেন্ট তার জবাব দেয়ার জন্য ২১ দিন সময় পাবেন বলেও জানান তিনি।
সেইনকে গণহত্যার জন্য দায়ী ঘোষণা করা হবে বলে পান্নুনি সংবাদ সংস্থা এএফপি’কে তাদের বিশ্বাসের কথা জানায়।
পান্নুনি বলেন, একবার গনহত্যার স্বীকৃতি পেলে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের দায়িত্ব হবে যারা গণহত্যার জন্য দায়ী তাদেরকে আদালতে অভিযুক্ত করা। কারণ যুক্তরাষ্ট্র এরকম একটি কনভেনশনে সাক্ষর করেছে।
তবে প্রেসিডেন্টের একজন মুখপাত্র সোমবার বেসামরিক মামলাটি প্রত্যাখান করে বলেছেন, মায়ানমার আমেরিকার মুখাপেক্ষি নয়। আমেরিকার ফেডারেল কোর্টের এই মামলা মোকাবেলার জন্য মায়ানমারের সেখানে যাওয়ার কোন কারণ নেই।
বৈরি আচরণের কারণে রোহিঙ্গাদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। যার কারণে আঞ্চলিকভাবে শরণার্থী সংকট তৈরি হয়। ২০১১ সালে অর্ধশতকের সামরিক শাসন থেকে মুক্ত হয়ে আগামী মাসে মায়ানমারে বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।