রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ পরিচালনাকারি এনজিও’র বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে ২৭ জানুয়ারি অবস্থান কর্মসুচি থেকে পরবর্তী কর্মসূচীর ঘোষণার হুঁশিয়ার দিয়েছেন স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন।
স্থানীয়দের চাকুরিচ্যুত করা, চাকরি পুনঃবহাল আর ৭০ ভাগ চাকরি দেয়াসহ নানা বিষয় নিয়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ পরিচালনাকারি এনজিও’র বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন স্থানীয় সংগঠনগুলো।
এসব বিষয় নিয়ে এখন মুখোমুখি অবস্থানে স্থানীয়দের নানা সংগঠন আর এনজি ও সংস্থা গুলো। বিভিন্ন অভিযোগে সংগঠন গুলো ধারাবাহিক আন্দোলন শুরু করেছে। স্থানীয়দের দাবি চাকুরিচ্যুতদের চাকুরি ফেরত এবং ৭০ শতাংশ স্থানীয়দের চাকরি প্রদান।
অন্যথায় এনজিও সংস্থাকে প্রতিহত করার ঘোষণাও দিয়েছেন সংগঠন গুলো। জেলা প্রশাসন আর শরনার্থী ও ত্রান কমিশনার বলছেন বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।
মিয়ানমারের রাখাইনে সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ বাচাঁতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ শুরু করে।
মানবিক কারনে পালানো রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ। এরপর উখিয়া টেকনাফের ৩২ টি ক্যাম্পে শুরু হয় তাদের বসবাস। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়া ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে নানা সহায়তা দেয়ার জন্য কাজ করছে ২ শতাধিক আর্ন্তজাতিক ও দেশি-বিদেশি সংস্থা।
ওখানে কিছু সংখ্যক স্থানীয় লোকজন চাকুরি হলেও সম্প্রতি এদের গণহারে ছাঁটা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে নানা সংগঠন কক্সবাজার শহর ও উখিয়ায় বিক্ষোভ, মানববন্ধন, স্মারক লিপি প্রদান সহ নানা আন্দোলন করছে।
কক্সবসাজারবাসী সংগঠনের মুল সমন্বয়ক ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থানীয়দের চাকরি স্থানীয়দের অধিকার। একটি মহল সুপরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেশ বিরোধী কর্মকান্ড করার জন্য স্থানীয়দের চাকরি থেকে বাদ দিচ্ছে। আমরা আগামী ২২ জানুয়ারি জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেবো,২৭ জানুয়ারি অবস্থান ধর্মঘট করে পরবর্তী কর্মসুচী ঘোষণা করবো।
রোহিঙ্গাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত উখিয়া-টেকনাফের অধিকার ও অস্তিত্ব রক্ষায় ১০ দফা দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্বারকলিপি দিয়েছে ‘জাগো উখিয়া’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী ও মানবসেবামূলক সংগঠন।
এ সংগঠনের প্রধান আইনজীবী শফিউল করিম মিঠু বলেন,আমাদের ১০ দফা মধ্যে রয়েছেঃ
১। ত্রাণ নয় প্রতি ঘরে ঘরে যোগ্যতা শিথিল পূর্বক শতভাগ চাকুরির নিশ্চয়তা,
২। সকল আইএনজিও, এনজিও তে নিয়োগকৃত রোহিঙ্গাদের ছাঁটাই বন্ধ ও রোহিঙ্গা নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ করা।
৩। প্রকল্প শেষ হওয়ার অজুহাতে ককসবাজারের বাইরের চাকুরিজীবীদের বহাল রেখে স্থানীয়দের ছাঁটাই করছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৪। সড়ককে অধিকতর নিরাপদ করণে ভারী যান চলাচলের সময় নির্ধারণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া।
৫। স্থানীয়দের অধিকার সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে উপজেলায় মনিটরিং কমিটি গঠন করা।
৬। দক্ষতা অর্জনের জন্য পরিকল্পিত ভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া।
৭। রোহিঙ্গা সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেত্রসমুহ চিহ্নিত করে গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়নসহ অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের ভাতা অথবা শিক্ষার্থীদের পার্ট টাইম চাকুরীর ব্যবস্থা গ্রহণ।
৮। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাহিরে অবাধ বিচরণ বন্ধে প্রয়োজনীয় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ।
৯। রোহিঙ্গাদের বাসস্থানের জন্য যে সব বনভুমি উজাড় করা হয়েছে তার বিপরীতে বনায়ন কর্মসুচী গ্রহণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
১০। প্রত্যাবাসন বিলম্ব হলে সার্বভৌমত্বের হুমকি ঠেকাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গাদেরকে ঢালাও এক স্থানে না রেখে সুনির্দিষ্ট গন্ডির ভিতর রাখার প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ।
এনজিও সংস্থা ব্রাক থেকে চাকরি হারানো উখিয়ার এক যুবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,আমাকে কোন নোটিশ না দিয়ে বলেছে কাল থেকে তোমার চাকরি নাই।
আই ও এম থেকে চাকরি হারানো মোস্তাক আহমেদ বলেন,স্থানীয় হওয়ার কারণে আমার চাকরি গেছে। আমার সাথে যারা কক্সবাজারের বাইরের ছেলে মেয়ে ছিল তাদের চাকরি বহাল আছে।
কারিতাস থেকে চাকরি হারানো স্থানীয় যুবক ইমরান বলেন, বিভিন্ন সংস্থা থেকে কেবল কক্সবাজারের বাসিন্দা হওয়ার অপরাধে গণ ছাঁটাই চলছে। ২ শত বেশি এখন চাকুরিচ্যুত হয়েছে।
আমরা কক্সবাজারবাসীর করিম উল্লাহ বলেন,যে সব স্থানীয় ছেলে মেয়েদের চাকরি চলে গেছে, তাদের চাকরি ফেরতসহ প্রতিটি সংস্থায় ৭০ শতাংশ স্থানীয়দের চাকুরি প্রদান দকরতে হবে।
এনজিওদের সমন্বয় গ্রুপ ইন্টার সেক্টর কো ডিনেশন গ্রুপের মুখপাত্র সৈকত বিশ্বাস জানান, বেশ কিছু স্থানীয়রা চাকুরি করছেন।
তবে প্রকল্প বন্ধ হওয়ার কারণে কিছু লোক চাকরি হারায়। এটা উদ্দেশ্যমুলক নয়। তিনি বলেন,এটা নিয়ে কাজ চলছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, আন্দোলনকারিদের কাছে এনজিও’র নাম চাওয়া হয়েছে। কোন এনজি ও থেকে কি কারণে কার চাকরি গেছে। আগামী ২৭ জানুয়ারি এনজিওদের সাথে সভা আছে, সে সভায় এটি গুরুত্ব সহ আলোচনা হবে। তবে এ বিষয়টি দেখার জন্য উখিয়া টেকনাফের ইউএনও দের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।