রোহিঙ্গা ইস্যুতে এই প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব (রেজুলেশন) গৃহীত হয়েছে। ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি যৌথভাবে উত্থাপন করে ওআইসি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন অবস্থান থাকলেও জাতিসংঘে সর্বসম্মতিক্রমে এই রেজুলেশন একটি বিরাট অর্জন।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের উচ্চ পর্যায়ের এক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘অতি জরুরি’ ভিত্তিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জোরদার করার দাবি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “রোহিঙ্গা সংকট প্রশ্নে প্রধান আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর নিষ্ক্রিয়তা বাংলাদেশকে মর্মাহত করেছে। সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল।” তার এই সাহসী উচ্চারণ ছিল পুরো বাংলাদেশের মানুষের মনের কথা, তারপরেই জাতিসংঘে এই রেজুলেশন।
মিয়ানমার থেকে ২০১৭ সালে লাখো রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার চার বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির বেসামাল অবস্থা ও বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থেমে আছে। চলতি বছরের শুরুতে চীনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রক্রিয়ায় আশার আলো দেখা গেলেও ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে ক্ষমতার পটপরিবর্তনে তা থমকে যায়।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা বলেন, ‘জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে রোহিঙ্গা রেজুলেশন, যা এই সঙ্কটের সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন।” ওই প্রস্তাবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দেওয়া এবং জাতীয় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কর্মসূচিতে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ যে উদারতা ও মানবিকতা প্রদর্শন করেছে, তার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়।
নিয়ম রক্ষার আলোচনার মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আটকে থাকা আর তাদের ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে বিরোধের মধ্যে ঝুলে আছে রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যত। বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে চাপ দিচ্ছে তাদের স্থায়ীভাবে রেখে দেয়া নয়তো তাদের কর্মের সুযোগ করে দিতে। সবমিলিয়ে এক অনিশ্চিত যাত্রায় এইসব রোহিঙ্গাদের জীবন।
নি:সন্দেহে বাংলাদেশের পদক্ষেপ প্রশংসার দাবিদার। তবে প্রশংসার চেয়ে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফেরাতে দরকার যথাযথ পদক্ষেপ। প্রতিবেশী দেশ ভারত-চীনসহ নানা দেশের সঙ্গে বাস্তবতার নিরীখে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া এখন সময়ের দাবি। আমাদের আশাবাদ, যথাযথ কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে জাতিসংঘ ও অন্যান্য প্রভাবশালী দেশকে সাথে নিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে।