২০১৭ সালের রোহিঙ্গা ঢলে তাদের নেতা মুহিবুল্লাহ আসে বাংলাদেশে। কয়দিন আগে তিনি আমেরিকা গিয়ে ট্রাম্পের সাথে দেখা করে এসেছেন। তখন থেকেই প্রশ্ন, তিনি আমেরিকা গেলেন কোন দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে? তাকে ট্রাম্প পর্যন্ত কে পৌঁছে দিল? আমেরিকা থেকে ফিরেই তিনি আবার রোহিঙ্গা ঢলের দুই বৎসর পূর্তি উৎসবের নেতৃত্ব দিলেন!
বাংলাদেশ মানবিক দৃষ্টিতে রোহিঙ্গাদের জায়গা দিয়েছে৷ না দিলে তারা সাগরে ডুবে মরতো৷ আর এখন আশ্রয়দাতা দেশের পুলিশের উপর হামলা করার স্পর্ধা দেখাচ্ছে তারা৷ তবে কি সরকারী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই তারা এ সমাবেশ করলো না? অথচ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এ সমাবেশের খবর সরকার জানে না৷ না জানলে রোহিঙ্গারা পুলিশের প্রতি তেড়ে আসল কিভাবে? রোহিঙ্গা সমাবেশে এতগুলা ডিজিটাল ব্যানার কারা দিল? তাদের হাতে হাতে মোবাইল ফোন কিভাবে আসল? বায়োমেট্রিকের এই সময়ে তারা এত সিম পেল কী করে? এই সিমগুলো রেজিষ্ট্রেশন করল কোন পরিচয়ে? সিম রেজিষ্ট্রেশন করতে ভোটার আইডি কার্ড লাগে৷ এরা আইডি পেলো কোথায়? একই রঙ্গের ইস্ত্রি করা পোশাকও কারা দিল তাদের?
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গেছে, মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গা শিবিরের ১৫ জন রোহিঙ্গা নিয়ে গঠন করেন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ নামক একটি সংগঠন। এ সংগঠন ৩০০ রোহিঙ্গাকে প্রশিক্ষণও দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে নিষেধ করে লিফলেটও বিতরণ করে তারা! রোহিঙ্গাদের দাবি পূরণ হলেই তবে তারা ফেরৎ যাবে বলেও মন্তব্য করে। কে পূরণ করবে তাদের দাবী? শোনা যাচ্ছে, মুহিবুল্লাহর সাথে সরাসরি যোগাযোগ জাতিসংঘের ইউএনএইচসিআর সংগঠনের। এই সংগঠনের কর্মীরাই নাকি তাকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দিয়েছে৷ অথচ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কিছুই জানেন না৷
রোহিঙ্গা সংকটের দু’বছর উপলক্ষে কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে সমাবেশ ও মিছিল করেছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা। কোনো দেশের আশ্রিত উদ্বাস্তুদের এ ধরনের সমাবেশ ও মিছিল করার অধিকার আছে কি? সমাবেশের বক্তব্যে তারা বলেছে, নাগরিকত্বসহ পাঁচ দফা দাবি পূরণ হলেই শুধু তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে। তারা স্লোগান দিয়েছে, ‘আঁরা বর্মাত না যাইয়ুম’, অর্থাৎ ‘আমরা মিয়ানমারে যাব না৷’ তবে কি তারা জোর করেই বাংলাদেশে থাকতে চায়?
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে উজাড় হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও পাহাড়। এর ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে মাদক পাচার ও অপরাধও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের জন্য চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা৷ কাজেই রোহিঙ্গা সংকট যত দ্রুত সমাধান হবে ততই বাংলাদেশের জন্য মঙ্গল। কিন্তু একটি অশুভ চক্র রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা মিয়ানমারের দায়িত্ব, বাংলাদেশের নয়৷ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না এ জবাব কি বাংলাদেশ দেবে? রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রথম দফায় গত বছরের ১৫ নভেম্বর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মিয়ানমারে ফিরে যেতে সেদিন কোনো রোহিঙ্গা উপস্থিত হয়নি। প্রথম উদ্যোগ ব্যর্থ হয়৷ এরপরের বছর ২২ আগস্ট দ্বিতীয়বারের মতো প্রত্যাবাসনের তারিখ নির্ধারণ হলেও কোনো রোহিঙ্গাই মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি হলো না। উল্টো তারা লক্ষাধিক রোহিঙ্গার সমাবেশ ঘটালো৷ বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা থাকলেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের কাছে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে।পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইতোমধ্যে ১১ লাখ রোহিঙ্গার তালিকাই মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করার উচিত ছিল৷ এমনটি কেন ঘটলো এর জবাব কে দেবে?
১৯৯২ সালে একবার রোহিঙ্গারা দা-বটি লাঠি হাতে একযোগে স্থানীয়দের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেসময় রোহিঙ্গারা উখিয়া-টেকনাফকে তাদের রাজ্য দাবি করে স্থানীয়দের ৩ দিনের মধ্যে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছিল।
স্থানীয় অনেকেই বলছেন: সহায় সম্বল যা ছিলো তার সবই রোহিঙ্গাদের দান করে দিয়েছি। যাদেরকে দান করেছি, তারাই এখন আমাকে আমার ভিটেমাটি দখল করে নিয়ে তাদের আত্মীয়দের নিয়ে এসেছে। এখন মনে হচ্ছে, চরম ভুল করেছি, তারা আসলে অমানুষ ও অকৃতজ্ঞ৷ প্রতিবাদ করলে রোহিঙ্গারা দলবেঁধে স্থানীয়দের পিটিয়ে উল্লাস করে। তুচ্ছ কারণে হামলা করে স্থানীয়দের উপর। সুখশান্তি বিনষ্ট হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। তবে কি এরা সংখ্যাধিক্যের উন্মাদনায় উখিয়া ও টেকনাফকে তাদের রাজ্য দাবী করতে সশস্ত্র হয়ে উঠছে? ইতোমধ্যেই কক্সবাজারের উখিয়ার কোটবাজারের ভালুকিয়ার একটি কামারের দোকান থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী। এগুলো কিসের আলামত?
সংবাদপত্র সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিতরণের জন্য ‘মুক্তি’ নামের একটি এনজিও এসব অস্ত্র তৈরি করতে দিয়েছে। কামার অধীর দাস জানান, এনজিও মুক্তির জন্য একমাস আগে ২ হাজার ৬০০ পিস দেশীয় অস্ত্র তৈরির অর্ডার দেন ভালুকিয়ার বাসিন্দা সাইফুল। অর্ডার দেয়ার সময় তাকে ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম দেয়া হয়। কে এই সাইফুল? এসব এনজিও কার প্রতিনিধিত্ব করছে? গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা সংকটের দুই বছর পূর্ণ উপলক্ষে এই সমাবেশ কি আশ্রয়দানকারী দেশের প্রতি হুমকি নয়?
২০১৭ সালের এই দিনে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ঘটে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে। এর পর থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে তারা৷ বাংলাদেশ সরকার প্রথমে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে দিতে না চাইলেও পরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আবেগ স্বর্বস্ব প্রবল জনমতের চাপে সীমান্ত খুলে দিতে বাধ্য হয়৷ মুসলিম জাতিগত সেন্টিমেন্টে রোহিঙ্গাদের জন্য টাকা তোলাও শুরু করে তারা৷ যে বাংলাদেশ মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে সেই বাংলাদেশকেই আজ আশ্রিত রোহিঙ্গারা হুমকি দিয়ে বলেছে, একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। মিয়ানমারের নাগরিকত্ব ছাড়া তারা কখনোই ফিরবে না। মিয়ানমার বাহিনীর হামলার বিরুদ্ধে যারা টু শব্দটি উচ্চারণ না করে পালিয়ে এসেছিল, তারা আজ সংগঠিত হয়ে তাদের আশ্রয়দাতাকে হুমকি দিচ্ছে! ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার কারণে উখিয়া-টেকনাফের প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ স্থানীয় বাসিন্দা এখন সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। এই উড়ে এসে জোড়ে বসার কী পরিণতি হতে চলছে দেশে?
রোহিঙ্গারা পুলিশের সাথে মারামারি করছে৷ ডাকাত দল গড়ে তুলে ডাকাতি করছে৷ মাদক পাচারের সিন্ডিকেট গড়ে তুলছে৷ এই অকৃতজ্ঞ জাতিকে আশ্রয় দিয়ে মানবিক হতে গিয়ে বাংলাদেশ কি ভুল করেনি? এই আপদকে কিভাবে বিদেয় করবে এখন? ভিডিওতে দেখলাম, সমাবেশে বাধা দেয়ায় এক রোহিঙ্গা পুলিশের দিকে তেড়ে আসছে৷ এক মহিলা তার যুবক ছেলেকে উস্কে দিচ্ছে। যুবক ছেলেটি জামা খুলে পুলিশের দিকে তেড়ে আসছে৷ তখন পুলিশ ক্ষিপ্ত হলে মহিলাটি মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে বলছে,আপনারা দেখুন ওরা আমাদের নির্যাতন করছে৷তবে কি তারা আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের মানবিক বৈশিষ্টকে চাপা দিয়ে নির্যাতনকারী হিসাবে ফুটিয়ে তুলতে চায়? এমন অকৃতজ্ঞ জাতি কি মানবিক আচরণের যোগ্য?
২৬ আগস্টের কালের কন্ঠ পত্রিকার একটি প্রতিবেদন বলছে, সম্প্রতি কক্সবাজারে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের সমাবেশের নেপথ্যে পাকিস্তান ভিত্তিক আল খিদমাত ফাউন্ডেশনের হাত রয়েছে। এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করেছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইউনাইটেড নিউজ অফ ইন্ডিয়া। ওই প্রতিবেদন দাবি করা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের সমাবেশ আয়োজনের পেছনে পাকিস্তানের আল খিদমাত ফাউন্ডেশন মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে কাজ করেছে। আর রোহিঙ্গাদেরকে সমাবেশের আয়োজন করার জন্যও তারাই অর্থ দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আল খিদমাত ফাউন্ডেশন আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদাকে অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে। তবে কি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে জঙ্গী হামলার ক্ষেত্র প্রস্তুতে বেপরোয়া?
রোহিঙ্গাদের এই সমাবেশটিকে হেলাফেলা করে দেখলে তা বাংলাদেশের জন্য চরম আত্মঘাতি হবে৷ বাংলাদেশের শত্রুরা কি রোহিঙ্গাদের দিয়েই বাংলাদেশের চরম ক্ষতি করতে ফন্দিফিকিরে মেতে উঠছে না? তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আজ বাংলাদেশের ভৌগোলিক নিরাপত্তার জন্যই হুমকি হয়ে উঠেছে৷ ১৯৯২ সালে উখিয়া টেকনাফকে তাদের রাজ্য দাবী করে স্থানীয়দের এলাকা ছাড়তে বলেছিল৷ তখনকার জনবলের চেয়ে এবারকার জনবল অনেক বেশি শক্তিশালী৷ রয়েছে তাদের প্রশিক্ষিত টিম৷ রয়েছে দেশী বিদেশী পৃষ্টপোষক৷ রোহিঙ্গা সমাবেশটির মধ্য দিয়ে তারা আরও সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পেল৷ এই সমাবেশটি সম্পর্কে সরকার অবগত নয় এ কথাটি সত্যি হলে কি তা সরকারের চরম ব্যর্থতা নয়? যদি উখিয়া টেকনাফকে তাদের রাজ্য দাবী করে সশস্ত্র পন্থা বেছে নেয় তখন কী করবে সরকার? সুতরাং দায় এড়ানো নয়, যত দ্রুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পাঠাবে ততই নিরাপত্তা ঝুঁকিমুক্ত হবে দেশ৷
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)