প্রাথমিক সহানুভূতি কমে আসার পর রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রসঙ্গে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি বাংলাদেশের মানুষ। প্রায় ৭ লক্ষ রোহিঙ্গার ভরণপোষণ এবং তাদের নিজ দেশে দ্রুত ফেরত পাঠানোর পথ খুঁজছে এখন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈশ্বিক নানাবিধ প্রচারণা স্বত্বেও বিষয়টি অনেকটাই কঠিন বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
এ ক্ষেত্রে নানা সমীকরণে আন্তর্জাতিক সহায়তার আশা কমই রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলে অভিমত তাদের। তারা মনে করছেন, সমাধানের রাস্তা দৃশ্যমান না হলে বাস্তুচ্যুত হতভাগ্য মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের সহানুভূতি আরো দ্রুত সরে যাবে।
পুরো বাংলাদেশ শরণার্থীদের ওপর নির্মম নির্যাতন আর শিশু-নারী হত্যা ও ধর্ষণের কাহিনী শুনে সহানুভূতিশীল। প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে সাহায্য পাঠাচ্ছে তারা। তবে এটি পর্যাপ্ত নয়। আভ্যন্তরীণ সহায়তার এ ধারা ক্রমশ স্তিমিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গত সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের সমস্যার সমাধান করার জন্য বৈশ্বিক সাহায্য চেয়েছিলেন।
মিয়ানমারের প্রতি তাদের নাগরিকদের উপরে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবী তুলেছেন। রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসঙ্গের তত্বাবধানে রাখাইন অঞ্চলে সেফ জোন প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও এ বিষয়ে প্রস্তাব নাকচ করেছে মিয়ানমার।
দক্ষিণ পূর্ব এশীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল ওয়ার কলেজের প্রফেসর জাখারি আবুজ ‘র মতে মায়ানমার শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের কাছে খুব কম কার্যকর উপায় রয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ ইস্ট অ্যাসোসিয়েশন নেশনস (আসিয়ান) –এর সদস্য দেশ ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া রোহিঙ্গা নিয়ে বড় ধরণের বিক্ষোভ হলেও দেশ দুটি আসিয়ানে এ বিষয়ে কোন ভূমিকা রাখছেনা। আসিয়ানের সদস্য দেশ মিয়ানমারও।
বাংলাদেশ আসিয়ানের মাধ্যমে মায়ানমারের ওপর চাপ তৈরীতে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সাথে কাজ করার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু এ প্রচেষ্টা সফল না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ রোহিঙ্গা সমস্যা আসিয়ানের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে’ বলে মন্তব্য করেন আবুজা।
জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে শরণার্থী ক্যাম্পসহ পুরো এলাকার প্রতিবেশ যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে। লক্ষাধিক মানুষের যেখানে সেখানে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার বিষয় মহামারীর বিস্তার ঘটাতে পারে। রয়েছে খাদ্য, পানি ও ঔষধের স্বল্পতা পুরো পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলছে।
লন্ডনে চ্যাথাম হাউস আন্তর্জাতিক বিষয়ক ইনস্টিটিউটের এশিয়া প্রোগ্রামের প্রধান চম্পা প্যাটেল এএফপিকে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ একা এই সংকট মোকাবেলা করতে পারবে না। সমাধানের রাস্তা দ্রুত দৃশ্যমান না হলে বাস্তুচূত হতভাগ্য মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নাগরিকদের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের সহানুভূতি আরো দ্রুত সরে যাবে রোহিঙ্গাদের থেকে। যা ইতিমধ্যে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির এবং বাংলাদেশ-মায়ানমার সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আলী রিয়াজ এএফপিকে জানান, ‘মিয়ানমারের গত কয়েক দশক ধরে একটি চরমপন্থী বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ ঘটেছে।
তিনি আরও বলেন, একমাত্র মিয়ানমার সেনাবাহিনী সশস্ত্র সংকটের চূড়ান্ত ও স্বল্পমেয়াদী সমাধান করতে পারে।